কার্ডিনাল মহোদয়ের শুভেচ্ছাবাণী
প্রিয়জনেরা,
পুনরুত্থানের শুভেচ্ছা বাণী লিখতে গিয়ে থেমে যাচ্ছি বারবার। পুনরুত্থানের কী আনন্দময় বাণী আপনাদের কাছে নিয়ে আসবো? পুনরুত্থান দিবস আসছে কিন্তু এই দিবস কী মুক্তি ও স্বস্থির বাণী, আনন্দের বার্তা আমাদের জন্য নিয়ে আসবে?
সারা তপস্যাকালটিতে ছিলাম আমরা বন্দী: গৃহবন্দী, বাড়ী-বন্দী, গ্রাম-শহর-দেশ-বন্দী। খ্রিস্টীয় জীবনসাধনার পরমকালটি অতিবাহিত করেছি গির্জায় যাওয়া থেকে বিরত থেকে, সংস্কার, খ্রিস্টযাগ ও পাপস্বীকার সাক্রামেন্ত ছাড়া; এক অভাবনীয় কষ্টের সময়! পবিত্রতার সবচাইতে শ্রেষ্ঠ সময়ে তার ভক্তজনগণের সেবা করতে না পারা পুরোহিতদের জন্য ছিল অসহ্য বেদনাদায়ক। কত গরিব-দুঃখী অনাহারে, শূণ্যতায় দিন কাটাচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবাই ভীত-সঙ্কিত। আর পুণ্য সপ্তাহে গোটা বিশ্ব ভোগ করেছে জীবনে অনেক ঝড়-ঝাপটা, দুঃখ-বেদনা, জ্বালা-যন্ত্রণা। অনুভব করেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রিয়জনেরা পাশে-না-থাকার একাকীত্বের চরম বেদনা এবং পরিসমাপ্তিতে নিগৃহীত হয়ে নিরবে মৃত্যবরণ করা। যিশুর জীবনের শেষে নিজে কিছু না করে, তার প্রতি সবকিছু করা হয়েছে, তিনি সবকিছু ভোগ করেছেন। এ ব্যাপারে আমরাও যাতনা-ভোগ করার সময় কাটিয়েছি।
প্রিয়জনেরা, ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ যে, ঐসব ভাবনায়, প্রার্থনা ও প্রায়শ্চিত্তে পরস্পরের সাথে আমরা একাত্মতা অনুভব করতে পেরেছি। অসাধারণভাবে পরস্পরের পাশে দাঁড়াবার সুযোগ আমরা পেয়েছি। উপবাসকালে ষিশুর অনেক কাছে আসার ও কাছে থাকার সুযোগ আপনারা গ্রহণ করেছেন। আপনাদের যাতনাভোগের যাত্রায় আপনারা বিশ্বস্ত ছিলেন খ্রিস্টযিশুতে, তার সাথে পথ চলেছেন। দেশ, সমাজ ও জগতের পরিস্থিতিতে আপনারা বিশ্বাসী, আগ্রহী, ধর্মের জন্য পিপাসিত হয়ে, পরিবারে সকলে এক হয়ে বিশ্বাসের পথ চলেছেন। গোটা বিশ্ব সবাই মিলে “এক” হওয়ার অভিজ্ঞতা পেয়েছে। আর এখানেই আপনাদের কাছে পুনরুত্থানের শুভেচ্ছা জানানোর কারণ ও সাহস খুঁজে পাচ্ছি।
আসলে পুনরুত্থান হচ্ছে আমাদের বিশ্বাস, পুনরুত্থান হচ্ছে আমাদের আশা। সেই বিশ্বাসে ও আশায় আমরা জীবন যাপন করছি। করোনার দুর্যোগে মৃত্যুসামিল অবস্থা, গুহার অন্ধকার, কবর থেকে বের হবার বিশ্বাস ও আশা আমাদের আছে। তবে সেই পুনুরুত্থান দিবস কোন দিন হবে আমরা সঠিক করে কেউ বলতে পারি না। আমরা বিশ্বাস করতে পারি, আশা করতে পারি যে, যিশুর পুনরুত্থানের সহভাগী আমরা একদিন হতে পারব। সেই বিশ্বাস ও আশায় আমরা পথ চলি, এবং বলি “ যিশু সত্যিই পুনরুত্থান করেছেন”। সেই পুনরুত্থানে আমরা বিশ্বাসী ও প্রত্যাশী।
পুনরুত্থানের সময় যিশুর শিষ্যেরা যেমন যিশুর মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের বিশ্বাসী হয়ে ও আশান্বিত হয়ে জীবনযাপন করেছিলেন পবিত্র আত্মার অবতরন প্রত্যাশায় ও শক্তিতে আমরাও সবাই যেন সেরূপ জীবনযাপন করতে পারি সেই আশীর্বাদ পুনরুত্থিত প্রভু যিশুর কাছ থেকে কামনা করি।
আপনাদের সাথে একাত্মতায় ও আশীর্বাদান্তে,
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি
ঢাকার আর্চবিশপ।