“মাঘ ফাল্গুনের গল্পগাথা’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব : সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকপ্রেমীদের মিলন মেলা 

সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকপ্রেমীদের উপস্থিতিতে ‘মাঘ ফাল্গুনের গল্পগাথা’ গল্পগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। লেখিকা জেন কুমকুম ডি’ক্রুজের প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশনা উৎসবে মেট্রো ওয়াশিংটনের দেড় শতাধিক সাহিত্য,সাংস্কৃতিকপ্রেমী, সাংবাদিক ও শুভাকাংখী উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ফোরাম, মেট্রো ওয়াশিংটন ও লেখিকার পরিবার।
গত ২৭ অক্টোবর শুক্রবার মেরিল্যান্ডের সিলভার স্প্রিং শহরের রস্কো আর নিক্স এলিমেন্টারি স্কুল অডিটোরিয়ামে প্রকাশনা উৎসব শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাত ঘটিকায়। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক, স্থপতি আনোয়ার ইকবাল কচি, ইব্রাহিম চৌধুরী, সম্পাদক, প্রথম আলো, নিউ ইয়র্ক, ফাদার আগষ্টিন বুলবুল রিবেরু, সম্পাদক, সাপ্তাহিক প্রতিবেশী ও ছড়াকার, লেখক খোকন কোড়ায়া, সভাপতি, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান লেখক ফোরাম । অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন, সুবাস আব্রাহাম ডি’কস্তা, লেখক খ্রীষ্টফার পিউরিফিকেশন, জুড ভি গোমেজ, কবি শুক্লা গাঙ্গুলি, নিউজ বাংলা সম্পাদক শফি দেলোয়ার কাজল, ডাক্তার প্যাট্রিসিয়া শুক্লা গমেজ, ড. পল ফেবিয়ান গমেজ, স্ট্যানলি খোকন গোমেজ,আওয়ামী লীগ নেতা জিআই রাসেল, জেবা রাসেল ও সাদেক খানসহ আরো অনেকে।
বিপুল এলিট গনছালভেস এর উপস্থাপনায় দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে প্রকাশনা উৎসবের প্রথম পর্বের সূচনা হয়। এ সময় লেখিকা বই সহকারে ছোট ছেলে রনক মার্টিন, ছেলে বৌ এলিস মার্টিন ও নাতি অর্ণ মার্টিন ‘আলো আমার আলো’ গানের মূর্ছনায় মঞ্চে প্রবেশ করেন। পরে আলোচকবৃন্দ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মেরীল্যাণ্ডে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি শ্যামল ডি’কস্তা ও বাঙালি-আমেরিকান খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি ডমিনিক রেগো এবং অনলাইন পোর্টাল ‘নিউজ বাংলা’র সম্পাদক লেখক শফি দেলোয়ার কাজল।
খোকন কোড়ায়ার সঞ্চালনে ও সভাপতিত্বে বইয়ের উপর আলোচনা করেন স্থপতি আনোয়ার ইকবাল কচি।  তিনি বলেন, ‘এই বইটির নামকরণ করা হয়েছে,মাঘ ফাল্গুনের গল্পগাথা, মাঘ মাস আর ফাল্গুন মাস এক মাসের ব্যাপার। কিন্তু দেখা যায় ফাল্গুন থেকে মাঘ পুরো এক বছরের ব্যাপার। বইটিতে তেরোটি গল্প স্থান পেয়েছে, অর্থাৎ বার মাসে তেরোটি গল্প।’ আনোয়ার ইকবাল বলেন,’লেখিকা তার গল্পে চিত্রায়ন করেছেন প্রথমে কলকাতা থেকে ঢাকা।  অর্থাৎ তিনি গল্পে তিন প্রজন্মকে দেখিয়েছেন।’ তিনি বলেন,’ সুন্দর এই বইয়ের জন্য দিদিকে ধন্যবাদ এবং আশা করি ভবিষ্যতে আরো বই পাবো।’

আলোচনা পর্বে সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ও বইটির প্রকাশক ফাদার আগষ্টিন বুলবুল রিবেরু বলেন, ‘ছোটবেলায় প্রতিবেশীর পাতায় দিদির লেখা পরে ভাবতাম বয়েস অনেক কম, পরে যখন প্রতিবেশীতে কর্ম শুরু করি তখন দেখলাম তিনি মোটামুটি বয়স্ক একজন কিন্তু মনের বয়েস কম। মনের বয়েস কম বলে তিনি সাবলীল ভাষায় মনের কথা ব্যক্ত করেন। ‘ভালো মানুষের কাছ থেকে ভালো কিছু আসতে পারে , কুমকুম দিন ভালো কিছু চিন্তা করেন বলেই তার কাছ থেকে ভালো কিছু আমরা পাই।’ ফাদার বলেন,’প্রতিবেশী প্রকাশনী এ প্রকাশনার সাথে জড়িত হতে পেরে আনন্দিত। প্রতিবেশী প্রকাশনী থেকে যতগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে জেন কুমকুমের ‘মাঘ ফাল্গুনের গল্পগাথা’ বইটি তার মধ্যে অন্যতম একটি যা পাঠে আনন্দ ও আরাম জাগে প্রাণে।

প্রথম আলো, নিউ ইয়র্ক সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন,’ আমরা নিউ ইয়র্ক থেকে পত্রিকা সম্পাদনা করি,এখানে আমাদের পাঠক যারা বাংলাদেশ থেকে নতুন আসেন বয়স্কজন তারা প্রতি সপ্তাহে মসজিদে,মন্দিরে গির্জায় যান। সেখান আমাদের পত্রিকাগুলো দেয়া হয়।’ তিনি বলেন,’আমাদের ছেলেমেয়েরা এই পত্রিকার পাঠক না, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যারা আসেন তারা এই পত্রিকা সংগ্রহ করে পড়েন। তারা পত্রিকাটি উল্টে-পাল্টে দেখেন কার লেখা গল্প ছাপা হলো।’ ইব্রাহিম বলেন,’এখনো যারা লেখালেখি করেন তাদের প্রচণ্ড ভালোবাসি, শ্রদ্ধার সাথে দেখি।’ তাই লেখিকার সন্তান রণককে কৃতজ্ঞতা জানান মায়ের প্রকাশনায় উদ্যোগ নিয়েছেন বলে।  তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমরা পত্রিকায় যে ধরণের লেখা পড়েছি এই বইতে সেই ধরণের স্বাদ পেয়েছি।’
অনুষ্ঠানের মধ্যমনি লেখক জেন কুমকুম বলেন, ‘আমার এই অনুষ্ঠানে আমি প্রথম আলো সম্পাদক ইব্রাহিক চৌধুরী ভাইকে ও কচি ভাইকে পেয়ে অনেক অনেক খুশি, আনন্দিত ও ধন্যবাদ জানাই, সেই সাথে প্রতিবেশীর সম্পাদককেও ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, ‘আমার বাবা আমাকে লেখায় অনুপ্রেরণা দিতেন, লেখালেখি নিজেকে ধরে রাখতে হয়।’ তিনি বলেন,’ বিয়ের পর আমি গ্রামে চলে যাই। সেখানে জমি চাষ করেছি, নানা বাগান করেছি দুই ছেলেকে নিয়ে। এর মাঝে লিখে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে ঢাকা থেকে পত্রিকা এনে পড়তাম, লিখতাম বেগম, সংবাদ ও প্রতিবেশীতে লিখতাম।’
আলোচনা পর্ব শেষে উপস্থিত সম্মানিত আলোচক ও অতিথিদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ফোরামের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। জনাব ইব্রাহিম চৌধুরীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন সোশ্যাল একটিভিস্ট ও ফোরামের উপদেষ্টা সুবাস আব্রাহাম ডি’কস্তা, স্থপতি আনোয়ার ইকবাল কচির হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন  বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি শ্যামল ডি’কস্তা, জেন কুমকুম ডি’ক্রুজের হাতে ক্রিস্ট তুলে দেন ফোরামের উপদেষ্টা কবি রুবি মার্গারেট রোজারিও, ফাদার আগষ্টিন বুলবুল রিবেরু’র হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি ডাঃ প্যাট্রিসিয়া শুক্লা গমেজ এবং খোকন কোড়ায়া’র হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বাঙালি-আমেরিকান খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি ডমিনিক রেগো।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ফোরামের অনিয়মিত আয়োজনের তৃতীয় সেশন ‘প্রবাসের মাটিতে বাংলা গান।’ সুকুমার পিউরীফিকেশনের সঞ্চালনে গানের পর্বে অংশ নেয়, রোদেলা পিউরিফিকেশন, এরিকা কোড়াইয়া,এনজি কস্তা, অমি ডি’কস্তা, জুলি লেনি গনছালভেস, রীমা গমেজ ও মুক্তা মেবেল রোজারিও। দেশাত্মবোধক, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি ও লোক সংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় এই শিল্পীগণ।  সঙ্গীতে তবলায় সঙ্গত করেন ড. পল ফেবিয়ান গমেজ ও সুকুমার পিউরিফিকেশন এবং মন্দিরাতে পলাশ ফ্রান্সিস কস্তা। খাদ্য ও অন্যান্য সহযোগিতায় ছিলেন, শ্যামল ডি’কস্তা, পলাশ ডেমিয়ান পিরিচ, বিভাস ফ্রান্সিস রোজারিও, জনি জন গমেজ, চপল ইগনেসিয়াস পেরেরা,মুক্তা মেবেল রোজারিও,আগষ্টিন বিপুল ডি’কস্তা,জিম রোজারিও,লেখক খ্রীষ্টফার পিউরিফিকেশন, রনক মার্টিন, এলিস মার্টিন,অতুল পিউরিফিকেশন ও সুবাস আব্রাহাম ডি’কস্তা।
সার্বজনীন প্রার্থনা পরিচালনা করেন আমেরিকান ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাদার তিয়াস গমেজ, সিএসসি।
রাত ১০ ঘটিকায় রাতের আহারের মধ্যে দিয়ে প্রকাশনা উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
সংবাদদাতা : -সুবীর কাস্মীর পেরেরা