“বিশ্ব পিতামহ-পিতামহী ও প্রবীণ দিবস” – এর বাণী

“বিশ্ব পিতামহ-পিতামহী ও প্রবীণ দিবস” উপলক্ষে

বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর
পরিবার জীবন কমিশনের সভাপতির বাণী

খ্রিস্টেতে শ্রদ্ধেয় ও স্নেহাস্পদ ভাইবোনেরা,

আমি বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর পরিবার জীবন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। এই বছর জুলাই ২৫, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস গোটা বিশ্বমণ্ডলীতে  “পিতামহ-পিতামহী  ও প্রবীণ দিবস” উদযাপন করতে আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা খ্রিস্টবিশ্বাসীগণ জানি যে, জুলাই ২৬ তারিখ হল যিশুর

নানা-নানী, অর্থাৎ মা মারীয়ার পিতামাতা সাধু যোয়াকিম ও সাধ্বী আন্নার পার্বণ দিবস। তাই পোপ মহোদয় ঘোষণা করেছেন যে, প্রতি বছরই বিশ্বমণ্ডলীতে ২৬ জুলাই সাধু যোয়াকিম ও সাধ্বী আন্নার পার্বণ দিবসে (যদি জুলাই ২৬ রবিবার দিন না হয়) তবে  নিকটতম রবিবারে “পিতামহ-পিতামহী  ও প্রবীণ দিবস” উদযাপন করা হবে। এই উপলক্ষে প্রথম বছরে মূলভাব হিসাবে পুণ্যপিতা পোপ মহোদয় বেছে নিয়েছেন যিশুর সেই কথা “আমি সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে আছি” (মথি ২৮:২০)। এই কথাটি মথি লিখিত মঙ্গলসমাচারের শেষ বাক্যের শেষ অংশ। যিশু স্বর্গারোহণের আগে তার প্রেরিতশিষ্যদের আশ্বস্ত ক’রে এই কথা বলেছেন, যেন তারা ভয় না পায়; বরং সাহসের সঙ্গে তিনি যা-কিছু আদেশ ও শিক্ষা দিয়েছেন, তাঁর শিষ্যেরা সকলকে পালন করতে শেখান। যিশু হলেন পবিত্র ত্রিত্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি, পুত্র ঈশ্বর অর্থাৎ তিনি যখন বলেছেন আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তার মানে স্বয়ং ত্রিত্ব-ঈশ্বর আমাদের সকলের সাথে আছেন। তাছাড়া মথি লিখিত মঙ্গলসমাচারে আমরা দেখতে পাই, যিশুর জন্মের আগে স্বর্গদূত গাব্রিয়েল যখন কুমারী মারীয়ার কাছে শুভ সংবাদ নিয়ে আসেন, তখন বলেছিলেন “শোন কুমারী কন্যাটি হবে গর্ভবতী, সে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে। একদিন সবাই তাঁকে ইম্মানুয়েল বলে ডাকবে।” (নামটির অর্থ হল : “ঈশ্বর আমাদের সঙ্গেই আছেন”)।

আমাদের দেশে তথা গোটা বিশ্বে অনেক পরিবারে পিতামহ-পিতামহী ও প্রবীণগণ যথেষ্ট সম্মান-শ্রদ্ধা, মর্যাদা, ভালবাসা ও সেবা-যত্ম পান। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে প্রবচন গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে : “নাতি-নাত্নীরা বৃদ্ধদের মুকুটের মতো; পিতামাতাকে নিয়ে সন্তানরা গর্ব বোধ করে” (প্রবচন ১৭:৬)। তার মানে হলো মানুষ যেমন মুকুট মাথায় পরিধান ক’রে গর্ব অনুভব করে, একজন রাজা তার মুকুট জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করে, তেমনি ভাবে নাতি-নাত্নীরা দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণদের কাছে মুকুটের মত এবং তারা নাতি-নাতিনদেরকে সেই ভাবে স্নেহ-যত্ন করে, আদর-ভালবাসা ও সুশিক্ষা দান করে, তাদের রক্ষা করে এবং তাদের নিয়েই যেন দাদা-দাদী ও নানা-নানী ও প্রবীণদের সব আনন্দ ও সুন্দর জীবন যাপন। প্রবচন গ্রন্থে আরো বলা হয়েছে: “কারো শুভ্র কেশ যেন তার গৌরবের মুকুট, যা অর্জিত ধর্মনিষ্ঠ জীবন যাপনে” (প্রবচন ১৬:৩১)। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রবীণদের জীবন অভিজ্ঞতা, তাদের জ্ঞান-প্রজ্ঞা সব-কিছু ধর্মিষ্ঠ জীবন যাপনের ফসল এবং তাই নাতি-নাত্নীরা যেন দাদা-দাদী ও নানা-নানীদের কাছ থেকে ধর্মিষ্ঠ জীবন যাপনের সেই সুন্দর শিক্ষা ও আদর্শ গ্রহণ ক’রে দেহে-মনে-প্রাণে জ্ঞানে-বয়সে ও প্রজ্ঞায় বড় হতে সুযোগ গ্রহণ করে এবং প্রতিনিয়ত আপ্রাণ চেষ্টা করে। আপনার পরিবার কেমন চলছে? দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণগণ পরিবারে কেমন আছেন ও কিভাবে থাকেন? ভালবাসায় না কী অবহেলায়?

আমরা যদি কাউকে, বিশেষভাবে দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণগণ, যাদের বাদ দিয়ে আমাদের জীবন চিন্তা করতে পারি না, তাদের যদি আমরা অবহেলা করি, অবজ্ঞা করি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান, মর্যাদা, ভালবাসা ও সেবাযত্ন না করি, উদাসীন থাকি, তবে আমরা মহান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকেই অবজ্ঞা করি, অশ্রদ্ধা ও অসম্মান করি। আর ঈশ্বরকে অশ্রদ্ধা, অসম্মান করা মানে নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করি, কেননা স্বয়ং ঈশ্বরই সব-কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও অধিশ্বর। তিনি আল্ফা অর্থাৎ আরম্ভ, এবং তিনি ওমেগা অর্থাৎ সমাপ্তি। এই বিষয়টি মানুষ হিসাবে সকলকেই গভীর ভাবে ধ্যান ও উপলব্ধি করতে হবে এবং সে ভাবে জীবন যাপন ক’রে সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বরের প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। সাধু পল যেমন বলেন, “তোমরা যা-কিছু বল, যা-কিছু কর, সবই যেন প্রভু যিশুর নামেই হয়; তাঁর মাধ্যমে পিতা ঈশ্বরকে তোমাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েই তা যেন হয়” (কলসীয় ৩:১৭)। যে ব্যক্তি বা যারা কৃতজ্ঞ থাকে, তারা স্বভাবতঃই উদার মনের হয় এবং তারা দিনে দিনে ভালবাসার মানুষে রূপান্তরিত হতে থাকে এবং সকলকে গ্রহণ করে, শ্রদ্ধা-সম্মান করে ও মর্যাদা দান করে এবং সে বা তারা প্রতিদানে লাভ করে ঈশ্বরের পুরষ্কার।

সারা বিশ্বমণ্ডলীতে “পিতামহ-পিতামহী  ও প্রবীণ দিবস” উদযাপন উপলক্ষে তাদের সকলকে অশেষ শ্রদ্ধা-ভালবাসা ও শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানাই। আমরা যেন কেবলমাত্র আজকের দিনেই বা এ দিবস পালন উপলক্ষেই নয়, কিন্তু বছরে প্রতিদিন দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণদের প্রতি আরো বেশী শ্রদ্ধাশীল, মনোযোগী ও সংবেদনশীল হতে চেষ্টা করি এবং সকলে মিলে প্রতিটি পরিবারে খ্রিস্টিয় আদর্শ বজায় রেখে সমাজে সুদৃষ্টান্ত ও শান্তি স্থাপন করতে পারি। বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারীর এই সংকটের সময়ে সকলের জীবনে, প্রতিটি পরিবারে, বিশেষ ভাবে দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণদের জীবনে ঈশ্বরের অনেক অনুগ্রহ-আশীর্বাদ কামনা করি। ঈশ্বর আমাদের সকলকে তার ভালবাসার আশ্রয়ে সুরক্ষা দান করুন।

 

+ বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি

ধর্মপাল, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ;
চেয়ারম্যান, সিবিসিবি পরিবার জীবন কমিশন;
জেনারেল সেক্রেটারী, বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনী।