বিশ্ব আহ্বান দিবস ২০২৩ খ্রিস্টবর্ষে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের বাণী

ঐশ আহ্বান : অনুগ্রহ প্রেরণকর্ম

খ্রিস্টেতে প্রিয় ভাই-বোনেরা, প্রিয় যুবক-যুবতিবৃন্দ,

আমরা এ বছর ষাটতম বিশ্ব আহ্বান দিবস উদযাপন করছি। দ্বিতীয় ভাতিকান বিশ্বজনীন মহাসভা চলাকালে ১৯৬৪ খ্রিস্টবর্ষে পোপ ষষ্ঠ পল আহ্বান বৃদ্ধির জন্যেই এই বিশ্ব প্রার্থনা দিবসটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই দূরদর্শী উদ্যোগটি ঈশ্বরের আপন জনগণের প্রত্যেককে, ব্যক্তি ও সমাজ পর্যায়ে, সহায়তা করে যেন তারা সকল দুর্দশা ও আশা, চ্যালেঞ্জ ও অর্জনের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও প্রভুর ডাকে ও প্রেরণকর্মে সাড়া দিতে পারে – যা প্রভু আজকের জগতে আমাদের প্রত্যেকের উপর ন্যস্ত করেন।

এ বছর আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনাদের ধ্যানে ও প্রার্থনায় সহায়ক হিসেবে এই মূলভাবটি গ্রহণ করবেন : “ঐশ আহ্বান : অনুগ্রহ ও প্রেরণকর্ম”। এই দিনটি আমাদের কাছে একটি অতি মূল্যবান সুযোগ যেন আমরা বিস্ময়ের সাথে স্মরণ করি যে প্রভুর ডাক হল অনুগ্রহ, পরিপূর্ণ এক ঐশদান, এবং একই সাথে অন্যের কাছে মঙ্গলসমাচার বয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি অঙ্গীকার। আমরা এমন এক বিশ্বাসে আহূত যা সাক্ষ্য দান করে, যা অনুগ্রহের জীবনকে জগতে আমাদের প্রেরণকাজের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করে- ঠিক যেমনটি সংষ্কারসমূহে এবং মাণ্ডলীক মিলনের মধ্যে আমরা অভিজ্ঞতা করি। আত্মার দ্বারা চালিত হয়ে খ্রিস্টানুসারীগণ বিদ্যমান প্রান্তিক অবস্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন এবং মানবীয় বাস্তবতার প্রতি তারা সংবেদনশীল। তারা সর্বদা এই বিষয়ে সচেতন যে প্রেরণকাজ হল ঈশ্বরের কাজ যা একাকী বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, বরং মাণ্ডলীক মিলনের মধ্য দিয়ে মণ্ডলী-পালকদের নেতৃত্বে ভাইবোনদের সাথে একত্রেই তা বাস্তবায়ন সম্ভব। কারণ এই ছিল চিরকাল ঈশ্বরের স্বপ্ন : যেন ভালোবাসার মিলন-বন্ধনে আমরা তাঁর সাথে বাস করি।

বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বেই মনোনীত

প্রেরিতদূত পল আমাদের সামনে একটি অসাধারণ দিগন্ত উন্মোচন করেছেন : খ্রিস্টেতে, পিতা ঈশ্বর “জগৎ সৃষ্টির আগেই আমাদের মনোনীত করেছেন যেন আমরা তাঁর প্রেমময় দৃষ্টিতে পবিত্র ও অনিন্দনীয় হয়ে উঠতে পারি। তাঁর প্রেমময় ইচ্ছানুসারে যিশু খ্রিস্টের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদেরকে তাঁর দত্তক পুত্র হিসেবে আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন”(এফে ১: ৪-৫)। এই কথাগুলো জীবনকে তার পূর্ণ অর্থে খতিয়ে দেখতে আমাদের সাহায্য করে : ঈশ্বর তাঁর আপন প্রতিমূর্তি ও সাদৃশ্যে আমাদের “ধারণ করেছেন” এবং তিনি চান যেন আমরা তাঁর পুত্র-কন্যা হয়ে উঠি। আমরা সৃষ্ট হয়েছি প্রেম দ্বারা, প্রেমের জন্যে এবং প্রেমের সাথে এবং প্রেমেরই জন্যে আমরা নির্মিত।

ঐশ আহ্বান আমাদের সত্তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে খোদিত এবং আমাদের সুখ রহস্যের বাহক। জীবন চলার পথে সেই আহ্বান পবিত্র আত্মার দ্বারা সর্বদা নতুন নতুন পন্থায় আমাদের প্রতি ধ্বনিত হয়। ঐশ আহ্বান আমাদের অন্তরকে আলোকিত করে, ইচ্ছাকে বলবান করে, আমাদের বিস্ময়ে পূর্ণ করে এবং হৃদয়ে আগুন জ্বালায়। কখনও কখনও পবিত্র আত্মা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত রূপে আসে। তেমনি ঘটেছিল আমার জীবনে ১৯৫৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর যেদিন স্কুলে এক বার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমি যাচ্ছিলাম। পথে একটি গীর্জার পাশে থামার জন্য আমি অন্তরে এক অদম্য তাগিদ অনুভব করলাম। গীর্জায় ঢুকে আমি সেদিন পাপস্বীকার করেছিলাম। ঐ দিনটি আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে এবং এমন এক ছাপ রেখে গেছে যা আজও আমার মধ্যে বিদ্যমান। আসলে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে দান করার যে ঐশ আহ্বান, তা বিভিন্ন অবস্থায় ধীরে ধীরে তার পথ তৈরী করে নেয়। যেমন: দারিদ্র্যের পরিস্থিতির সাথে আমাদের মোকাবেলার মধ্যে, প্রার্থনার মুহূর্তে, অসুস্থতা কিংবা শোকের মুহূর্তে, কিংবা যখন আমরা সুসমাচারের একটি স্পষ্ট সাক্ষ্য প্রত্যক্ষ করি, কিংবা যখন এমন কিছু আমরা পাঠ করি যা আমাদের মনের দুয়ার খুলে দেয়, যখন আমরা ঈশ্বরের বাণী শ্রবণ করি এবং উপলব্ধি করি যে তা সরাসরি আমাদের উদ্দেশে বলা হচ্ছে, কিংবা যখন আমাদেরই একজন ভাই বা বোনের উপদেশ শুনি। ঈশ্বর তাঁর সীমাহীন সৃজনশীলতায় কত উপায়েই না আমাদের আহ্বান করেন।

প্রভুর উদ্যোগ ও তাঁর কৃপাশীল দান আমাদের পক্ষ থেকে একটি প্রত্যুত্তর বা সাড়া দাবী করে। ঐশ আহ্বান হলো ‘ঐশরিক ইচ্ছা ও মানব স্বাধীনতার আন্তঃক্রিয়া”, ঈশ্বর ও মানুষের হৃদয়ের মধ্যে একটি গতিশীল ও উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক। আহ্বানের দান হলো ঐশরিক বীজের মতো যা আমাদের অস্তিত্বের মৃত্তিকায় অঙ্কুরিত হয়, ঈশ্বর ও অন্যদের প্রতি আমাদের অন্তরকে মেলে ধরে, যাতে আমরা নিজেরা যে ধন খুঁজে পেয়েছি তা অন্যদের সাথে সহভাগিতা করতে পারি। আমরা যাকে ঐশ আহ্বান বলে বুঝি এই তার মৌলিক কাঠামো : ঈশ্বর ভালোবাসায় আমাদের ডাকেন এবং কৃতজ্ঞতা ভরে আমরা ভালোবাসায় তাঁর ডাকে সাড়া দেই। ঐশ-আলোয় আমরা অনুধাবন করি যে আমরা সকলে একই পিতার প্রিয় পুত্র-কন্যা এবং আমরা নিজেরা একে অন্যের ভাই-বোন। শিশু যীশুর সাধ্বী তেরেজা অবশেষে যখন এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝেছিলেন, তখন তিনি আনন্দে বলে উঠেছিলেন: “অবশেষে আমি আমার আহ্বান খুঁজে পেয়েছি! আমার আহ্বান হলো ভালোবাসা। সত্যিই, খ্রিস্টমণ্ডলীতে আমি আমার যথার্থ স্থান খুঁজে পেয়েছি… আমার মাতৃস্বরূপা মণ্ডলীর অন্তরে থেকে আমি হয়ে উঠবো ভালোবাসা।”

পৃথিবীতে আমি নিজেই একটি প্রেরণকর্ম

আমরা বলেছি যে ঈশ্বরের  আহ্বান হলো একটি ‘প্রেরণ’। প্রেরণকর্ম ছাড়া কোন আহ্বান থাকতে পারে না। যে নতুন জীবন আমরা খুঁজে পেয়েছি, যতক্ষণ না আমরা তা অন্যের কাছে তুলে ধরতে পারে, ততক্ষণ কোন আনন্দ এবং পূর্ণ আত্ম-উপলব্ধি আসতে পারে না। ভালোবাসার তরে ঈশ্বরের ডাক হলো এমন এক অভিজ্ঞতা যা আমাদের নিরব নিস্ক্রীয় থাকতে দেয় না। সাধু পল বলেন: “হায়রে আমি, মঙ্গলসমাচার যদি প্রচার না করি!” (১ করি ৯: ১৬)। আর সাধু যোহনের প্রথম পত্র এই কথা দিয়ে আরম্ভ হয়: “আমরা যা শুনেছি ও জেনেছি, দেখেছি ও স্পর্শ করেছি – বাণী যা দেহধারণ করেছে – তাই তোমাদের কাছেও আমরা প্রচার করছি, যেন আমাদের আনন্দ পরিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে” (দ্রঃ ১: ১-৪)।

পাঁচ বছর আগে Gaudete et Exsultate শীর্ষক প্রৈরিতিক উপদেশে আমি প্রত্যেক দীক্ষিত ব্যক্তির কাছে এই কথা লিখেছিলাম : “তোমাদের জীবনের সমস্তটুকুই একটি প্রেরণকর্ম হিসেবে তোমাদের দেখা প্রয়োজন”(নং ২৩)। হ্যাঁ, কারণ আমরা প্রত্যেকেই বলতে সক্ষম : “এই পৃথিবীতে আমি নিজেই একটি প্রেরণকর্ম; আর এই কারণেই আমি এখানে এই পৃথিবীতে রয়েছি” (Evangelii Gaudium ২৭৩)।

আমরা যেখানেই থাকি না কেন, খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের প্রেরণকাজটি হলো আমাদের কাজে ও কথায় যিশুর সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা এবং তাঁরই মণ্ডলীর আপনজন হওয়ার অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য আনন্দের সাথে বহন করা। তেমন প্রেরণকাজ প্রকাশ পায় দৈহিক ও আত্মিক দয়ার কাজের মধ্যে; ঘনিষ্ঠতা, সহানুভূতি ও কোমলতার প্রতিফলন ঘটায় এমন গ্রহণীয় ও নশ্বর জীবন-পদ্ধতির মধ্যে; বর্জন ও উদাসীনতার সংস্কৃতির বৈপরীত্যের মধ্যে। দয়ালু শমরীয়ের মতো (দ্রঃ লুক ১০: ২৫-৩৭) একজন প্রতিবেশী হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে সক্ষম হই আমাদের খ্রিস্টীয় আহ্বানের অন্তর্নিহিত অর্থ : যিশু খ্রিস্টকে অনুসরণ করা যিনি সেবা পেতে নয় বরং সেবা করতেই এসেছিলেন (দ্রঃ মার্ক ১০: ৪৫)।

এই প্রেরণধর্মী কার্যকলাপ কেবল আমাদের নিজস্ব ক্ষমতা, পরিকল্পনা ও প্রকল্প থেকে উদ্ভ‚ত হয় না, কিংবা আমাদের নিছক ইচ্ছাশক্তি থেকে অথবা গুণাবলি অনুশীলন করার প্রচেষ্টা থেকেও তা উদ্ভত হয় না; বরং এটি হল যিশুর সান্নিধ্যে থাকার মধ্য দিয়ে এক গভীর অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতি। কেবল তখনই আমরা একজন ব্যক্তি, একটি জীবনের সাক্ষ্য দিতে পারি এবং এভাবে হয়ে উঠি “প্রেরিতদূত”। শুধুমাত্র তখনই “আলো, আশীর্বাদ, উজ্জীবন, উন্নীতকরন, নিরাময় ও মুক্তি বহনের এই প্রেরণকাজ দ্বারা আমরা নিজেদেরকে মুদ্রাঙ্কিত হিসেবে, এমনকি মার্কা দিয়ে চিহ্নিত হিসেবে”বিবেচনা করতে পারি (Evangelii Gaudium, ২৭৩)।

মঙ্গলসমাচারে এরূপ অভিজ্ঞতার আদর্শ চিত্র হলো এম্মাউসের পথে যাত্রা করা সেই দুজন শিষ্য। পুনরুত্থিত যিশুর সাথে তাদের সাক্ষাতের পর তারা নিজেরা বলাবলি করছিল : “যখন তিনি পথে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং শাস্ত্রের অর্থ এমন করে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন আমাদের অন্তরে কী একটা আগুন জ্বলছিল না?” (লুক ২৪: ৩২)। ঐ দুজন শিষ্যের মাঝে আমরা দেখতে পাই “জ্বলন্ত হৃদয়, চলমান পদযুগল”-এর অর্থ কী। যার জন্যে আমি উন্মুখ হয়ে আছি, সেই লিসবন শহরে আসন্ন বিশ্ব যুব দিবসের জন্যে এটি আমারও আকুল আশা যে তার মূলভাব হবে: “মারীয়া উঠল এবং দ্রত পদক্ষেপে যাত্রা করলো” (লুক ১: ৩৯)। তেমনি জ্বলন্ত হৃদয় নিয়ে প্রত্যেক নর ও নারী উঠে দাঁড়ানোর এবং দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান অনুভব করুক।

একত্রে আহূত এবং সমবেত

মঙ্গলসমাচার রচয়িতা মার্ক সেই মুহূর্তটি বর্ণনা করেছেন যখন যিশু বারজন শিষ্যকে নিজের কাছে ডাকলেন, প্রত্যেকের নাম ধরে। তিনি তাদেরকে নিয়োগ দিলেন তাঁর সঙ্গে থাকতে ও তাঁর বার্তা প্রচার করার জন্যে প্রেরিত হতে, অসুস্থদের নিরাময় করতে এবং অপদূতদের তাড়িয়ে দিতে (দ্রঃ মার্ক ৩: ১৩-১৫)। প্রভু এইভাবে তাঁর নতুন সমাজের ভিত্তি স্থাপন করলেন। সেই বারজন শিষ্য ছিলেন বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণী ও পেশার; তাদের কেউই প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন না। মঙ্গলসমাচারগুলিতে আরো আহ্বানের কথা বলা হয়েছে, যেমন বাহাত্তরজন শিষ্যের কথা যাদেরকে যিশু দুজন দুজন করে প্রেরণ করেছিলেন বাণী প্রচারের উদ্দেশে (দ্রঃ লুক ১০: ১)।

খ্রিস্টমণ্ডলী হলো একটি Ecclesia; এই গ্রীক শব্দের অর্থ একত্রে আহূত ও সমবেত ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ যার উদ্দেশ্য যিশু খ্রিস্টের প্রেরণমুখী শিষ্যদের একটি মিলন-সমাজ গড়ে তোলা- যার সদস্যগণ নিজেদের মধ্যে ভালোবাসার সহভাগিতা করতে (দ্রঃ যোহন ১৩:৩৪; ১৫:১২) এবং সেই ভালোবাসা অন্য সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে অঙ্গিকারবদ্ধ যেন ঐশরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

মণ্ডলীর মধ্যে, আমাদের আহ্বান, ক্যারিজম ও সেবাকাজ (মিনিস্ট্রি)-এর বিভিন্নতা অনুসারে, আমরা সকলেই সেবক। নিজেদের ভালোবাসায় সমর্পণ করার জন্যে আমাদের সবার আহ্বান বিকশিত হয় ও তা সুনির্দিষ্ট বহিঃপ্রকাশ খুঁজে পায় – সাধারণ নারী-পুরুষের জীবনের মধ্যে – যারা একটি ক্ষুদ্র গৃহমণ্ডলী হিসেবে পরিবার গঠন করতে নিবেদিত; যারা মঙ্গলসমাচারের খামির হিসেবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে নবায়ন করতে সর্বদা কাজ করে চলেছেন। ব্রতধারী-ব্রতধারিনীদের মধ্যে – যারা উৎসর্গীকৃত নারী-পুরুষ হিসেবে সাক্ষ্যদান করে যাচ্ছেন, যারা তাদের ভাই-বোনদের মঙ্গলের জন্যে ঐশরাজ্যের প্রাবক্তিক চিহ্ন হিসেবে ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অভিষিক্ত জনদের মধ্যে – যারা পরিসেবক, যাজক ও বিশপ, বাণীপ্রচার, প্রার্থনা এবং পুণ্য ঐশজনগণের মিলন-বন্ধনকে লালন-পালনের সেবার্থে যারা নিয়োজিত। অন্য সকল আহ্বানের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতেই মণ্ডলীতে কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট আহ্বান -জীবন তার প্রকৃত স্বরূপ ও সমৃদ্ধি সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরতে পারে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, মণ্ডলী হলো আহ্বানের “ঐকতান” বা বহু সুরে মিলন (vocational “symphony”); ঐশরাজ্যের নব জীবনকে সারা জগতে ছড়িয়ে দিতে যেখানে প্রত্যেকটি আহ্বান পরস্পর যুক্ত অথচ স্বতন্ত্র এবং “বহির্মুখী” হওয়া সত্ত্বেও একত্রে সংযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অনুগ্রহ প্রেরণকর্ম : একটি উপহার একটি কর্ম-দায়িত্ব

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, ঐশ আহ্বান হলো একাধারে একটি উপহার ও একটি কর্ম-দায়িত্ব, নব জীবন ও প্রকৃত আনন্দের একটি উৎস। এই দিবসটিকে ঘীরে প্রার্থনা ও কার্যকলাপের যত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, তা আমাদের সকল পরিবার, ধর্মপল্লীর সমাজ, উৎসর্গীকৃত জীবনের বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং মাণ্ডলিক নানা সংস্থা ও মুভমেন্টগুলির মধ্যে আহ্বান চেতনা দৃঢ় করে তুলুক। পুনরুত্থিত প্রভুর আত্মা আমাদের সকল উদাসীনতা ও অনাগ্রহ দূর করে দিক এবং উপহার হিসেবে আমাদের দান করুক সহানুভূতি ও সহমর্মীতা। এইভাবে প্রেমময় ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে প্রতিদিনই নব জন্ম-লাভে আমরা যেন জীবনকে উদযাপন করতে পারি (দ্রঃ ১ যোহন ৪: ১৬)। আর প্রতিদানে আমরাও যেন অন্যদের প্রতি সেই প্রেম প্রদর্শন করতে পারি; সবর্ত্র এনে দিতে পারি জীবন, বিশেষ করে যেখানে রয়েছে বর্জন ও শোষণ, দারিদ্র্য ও মৃত্যু, যেন প্রেমের স্থানগুলি সম্প্রসারিত হয় এবং ঈশ্বর এই পৃথিবীতে আরো পূর্ণভাবে রাজত্ব করতে পারেন।

১১ এপ্রিল ১৯৬৪ খ্রিস্টবর্ষে প্রথম বিশ্ব আহ্বান দিবসের জন্য সাধু ষষ্ঠ পল যে প্রার্থনাটি রচনা করেছিলেন, তা আমাদের এই যাত্রায় আমাদের সঙ্গী হয়ে উঠুক:

“হে প্রভু যিশু, সকল আত্মার দিব্য পালক,

তুমি তো প্রেরিতদূতদের আহ্বান করেছিলে এবং তাঁদের করে তুলেছিলে মানুষ-ধরা জেলে।

যুবদের মধ্যে যারা উৎসাহী ও উদার প্রাণের অধিকারী,

তোমার অনুসারী ও সেবক করে তোলার জন্যে তুমি তাদেরকে নিজের কাছে টেনে নাও।

সকলের মুক্তির তরে তোমার যে তৃষ্ণা, সেই তৃষ্ণার ভাগ তাদের মধ্যেও জাগিয়ে তোল।…

সমগ্র পৃথিবীর দিগন্তসমূহ তাদের সামনে উন্মুক্ত কর।…

তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে তারা যেন এই জগতে তোমারই প্রেরণকর্মকে প্রসারিত করতে পারে,

যেন তোমার নিগুঢ় দেহটিকে অর্থাৎ মণ্ডলীকে গড়ে তুলতে পারে;

আর এভাবে তারা যেন হয়ে উঠতে পারে ‘জগতের লবণ’ এবং ‘জগতের আলো’ (মথি ৫: ১৩)”।

ধন্যা কুমারী মারীয়া আপনাদের সবার উপর দৃষ্টিপাত করুক এবং আপনাদের রক্ষা করুন। আমার আশীর্বাদসহ…

 রোম, সাধু যোহন লাতেরান, ৩০ এপ্রিল ২০২৩, পুনরুত্থানকালের চতুর্থ রবিবার

ফ্রান্সিস

 

ভাষান্তর: ফাদার পিটার শ্যানেল গমেজ