দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণ দিবস : বৃৃদ্ধা মা আন্না থামে না তার কান্না
ফাদার জ্যোতি ফ্রান্সিস কস্তা
১। পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিস কেবলমাত্র কাথলিক মণ্ডলীর খ্রিস্টভক্তদের জন্যেই নয়; বরং এই পৃথিবীর সকল মানুষের কথাই চিন্তা-করেন, ভাবেন, সবার জন্য প্রার্থনা করেন এবং কী কী করলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অভিন্ন বসতবাটি এই পৃথিবীর সকল মানুষের প্রকৃত মঙ্গল ও কল্যাণ হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেন, নির্দেশনা দেন এবং তা গ্রহণ করতে, জীবনে পালন করতে এবং অন্যের কাছে সত্য, ন্যায় ও শান্তির সাক্ষ্যবহণ করতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকেই প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছেন। গর্ভের শিশু থেকে শুরু ক’রে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণসহ সকলের জন্যেই তার মঙ্গল-চিন্তা, তার প্রার্থনা ও আশীর্বাদ সর্বদা রয়েছে।
এই বছর জুলাই ২৫, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস সারা বিশ্বমণ্ডলীতে “দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণ দিবস” উদযাপন করতে আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা খ্রিস্টবিশ্বাসীগণ জানি যে, জুলাই ২৬ তারিখ হল যিশুর নানা-নানী, অর্থাৎ মা মারীয়ার পিতা-মাতা সাধু যোয়াকিম ও সাধ্বী আন্নার পার্বণ দিবস। তাই পোপ মহোদয় ঘোষণা করেছেন যে, প্রতি বছরই বিশ্বমণ্ডলীতে ২৬ জুলাই সাধু যোয়াকিম ও সাধ্বী আন্নার পার্বণ দিবসে (যদি জুলাই ২৬ রবিবার দিন না হয়) তবে নিকটতম রবিবারে “দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণ দিবস” উদযাপন করা হবে। এই উপলক্ষে প্রথম বছরে মূলভাব হিসাবে পুণ্যপিতা পোপ মহোদয় বেছে নিয়েছেন যিশুর সেই কথা “আমি সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে আছি” (মথি ২৮:২০)। এই কথাটি মথি লিখিত মঙ্গলসমাচোরের শেষ বাক্যের শেষ অংশ। যিশু স্বর্গারোহনের আগে তার প্রেরিতশিষ্যদের আশ্বস্ত করে এই কথা বলেছেন, যেন তারা ভয় না পায়; বরং সাহসের সঙ্গে তিনি যা-কিছু আদেশ ও শিক্ষা দিয়েছেন, তা তাঁর শিষ্যেরা সকলকে পালন করতে শেখান। যিশু হলেন পবিত্র ত্রিত্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি, পুত্র ঈশ্বর অর্থাৎ তিনি যখন বলেছেন আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তার মানে স্বয়ং ঈশ্বর আমাদের সকলের সাথে আছেন। তাছাড়া মথি লিখিত মঙ্গলসমাচারে আমরা দেখতে পাই, যিশুর জন্মের আগে স্বর্গদূত গাব্রিয়েল যখন কুমারী মারীয়ার কাছে শুভ সংবাদ নিয়ে আসেন, তখন বলেছিলেন “শোন কুমারী কন্যাটি হবে গর্ভবতী, সে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে। একদিন সবাই তাঁকে ইম্মানুয়েল বলে ডাকবে।” (নামটির অর্থ হল : “ঈশ্বর আমাদের সঙ্গেই আছেন”)। আমরা যদি কাউকে, বিশেষভাবে দাদা-দাদী, নানা-নানী ও প্রবীণগণ, যাদের বাদ দিয়ে আমাদের জীবন চিন্তা করতে পারি না, তাদের যদি আমরা অবহেলা করি, অবজ্ঞা করি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান, মর্যাদা, ভালবাসা ও সেবাযত্ন না করি, উদাসীন থাকি, তবে আমরা মহান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকেই অবজ্ঞা করি, অশ্রদ্ধা ও অসম্মান করি। আর ঈশ্বরকে অশ্রদ্ধা, অসম্মান করা মানে নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করি, কেননা স্বয়ং ঈশ্বরই সব-কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও অধিশ্বর। তিনি আল্ফা অর্থাৎ আরম্ভ, এবং তিনি ওমেগা অর্থাৎ সমাপ্তি। এই বিষয়টি মানুষ হিসাবে সকলকেই গভীর ভাবে ধ্যান ও উপলব্ধি করতে হবে এবং সে ভাবে জীবন-যাপন করে সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বরের প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। সাধু পল যেমন বলেন, “তোমরা যা-কিছু বল, যা-কিছু কর, সবই যেন প্রভু যিশুর নামেই হয়; তাঁর মাধ্যমে পিতা ঈশ্বরকে তোমাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েই তা যেন হয়” (কলসীয় ৩:১৭)। যে ব্যক্তি বা যারা কৃতজ্ঞ থাকে, তারা স্বভাবতই উদার মনের হয় এবং তারা দিনে দিনে ভালবাসার মানুষে রূপান্তরিত হতে থাকে এবং সকলকে গ্রহণ করে, শ্রদ্ধা-সম্মান করে ও মর্যাদা দান করে এবং সে বা তারা প্রতিদানে লাভ করে ঈশ্বরের পুরষ্কার।
২। একবার ধর্মপল্লীতে সেবাকাজের সময় পরিবার পরিদর্শনে গিয়ে এক বৃদ্ধা মায়ের সাথে দেখা হল। ছোট্ট একটি ঘরে কোনমতে থাকেন। তাকে দেখাশুনা ও সেবা-যত্ন করার জন্য বলতে কেউ নেই। তার সাথে জীবনের গল্প শুনতে-শুনতে জানতে পারলাম তার ৫জন ছেলে-মেয়ে। ৩ জন ছেলে এবং ২ জন মেয়ে। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি অতি কষ্টে তার ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বড় হয়ে তারা চাকুরী করছিল এবং সুযোগ পেয়ে কয়েক বছরের মধ্যে ৩ ছেলেই মাকে বাড়ীতে রেখে পরিবারসহ বিদেশে চলে গেছে। আর দুই মেয়ে বিয়ে দেয়ার পর শশুর বাড়ী চলে গেল। তারা ২ জন নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। এর মধ্যে আবার তার এক মেয়ে তার স্বামীর সাথে পরিবার নিয়ে বিদেশে চলে গেছে। দেশে যে মেয়েটি থাকে সে চেষ্টা করে মাঝে মধ্যে দু’একবার মাকে দেখতে আসতে চেষ্টা করে। কিন্তু সে বলে তার সংসারে অনেক ব্যস্ততা আর তাই মাকে সময় দেবার মত বেশি সময় তার নেই। সুতরাং বৃদ্ধা মা জীবনকালে যেখানে ৫ জন ছেলেমেয়েকে কত কষ্ট ক’রে খেয়ে না খেয়ে বড় করেছেন, সেখানে এখন ৫ জনে মিলেও এক মাকে দেখে না। এই বৃদ্ধা মায়ের নাম আন্না। তার কথা শুনার পরে উপলব্ধি করলাম তার অন্তরে, বুকের ভিতরে জমা কত কান্না। এটা কী কেবল বৃদ্ধা মা আন্নার জীবনের কাহিনী না কী আমাদের নিজেদের পরিবারে আর আশে পাশে অনেক পরিবারে দিনে দিনে বৃদ্ধা মা আন্নার মত অনেক মায়ের, দাদা-দাদী আর নানা-নানীর চোখে থাকে অশ্রুজল আর হৃদয়ে কত-কত কান্না। আসলে আমাদের বর্তমান পৃথিবীতে আধুনিক, অত্যাধুনিক আর ডিজিটালের উন্নয়নের নামে হচ্ছেটা কী আর আমরা যাচ্ছি কোথায়? মানুষের প্রকৃত উন্নয়ণ কী এবং কোথায়? বাড়ী গাড়ী করে কেবলমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা? না কী মনুষ্যত্ববোধে চিন্তায়-চেতনায়, ধ্যানে-জ্ঞানে, ভাবে-স্বভাবে, আচরণে-বিচরণে বড় হওয়া অর্থাৎ মহৎ হওয়া, উদার হওয়া। প্রকৃত মানুষ হওয়া মানে হল আসল মানব উন্নয়ণ। অনেকে লেখা পড়ে করে হয়তো বড়-বড় ডিগ্রী পাচ্ছি, কিন্তু সত্যিকারের মানুষ কতজনে হতে পেরেছি বা সত্যিকারে মানুষ হচ্ছি?
৩। ধর্মপল্লীতে সেবাকাজের সময় আরেকদিন পরিবার পরির্দশনে গেলাম। গ্রামে কয়েকটি পরিবার পরিদর্শনের পর সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। শেষে একটি বাড়ীতে প্রবেশ করলাম। সেখানে গিয়ে খুব ভাল লাগলো। সেই পরিবারে দেখতে পেলাম দাদু-দাদী আর নাতি-নাতীনেরা একসাথে বসে গল্প করছে। আমাকে দেখে তারা আমাকে তাদের কাছে বসতে দিলো। আমি বসে তাদের সাথে একটু আলাপ করতে লাগলাম। দাদু-দাদীকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কেমন আছেন? তারা সুন্দর হাসি দিয়ে একসাথেই উত্তর দিলো- ফাদার, আমরা খুব ভাল আছি। তাদের সাথে আলাপ করতে করতে জানতে পারলাম তাদের জীবনের বাস্তব গল্প। তারা বলতে লাগলো- ফাদার, আমাদের দু’টি ছেলে আর দু’টি মেয়ে। মেয়ে দু’টি বিয়ের পরে শশুর বাড়ীতে থাকে, তবে তারা প্রায়ই আমাদের দেখতে আসে। যদি কোন কারণে দেখতে আসতে না পারে তবে ফোন করে খোঁজ খবর নেয়। ছোট ছেলে পরিবারসহ বাড়ীতেই আছে আর বড় ছেলেটি বিদেশে থাকে, আর তার ছেলে মেয়ে, স্ত্রী এবং বাড়ীতে যে ছোট ছেলে, তার পরিবারসহ আমরা এখনও একসাথেই আছি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, ঈশ্বর আমাদের কত অনুগ্রহ দান করেছেন এবং একসাথে রেখেছেন এবং আমরা বেশ ভাল আছি। নাতি-নাতীনদের কাছে জানতে চাইলাম তারা কেমন আছে। দুই ছেলের ঘরে ৫ জন নাতি-নাতনী। তারা বললো, ফাদার আমরা খুব ভাল আছি। মা-বাবা, দাদু-দাদী সবাই আমাদের ৫ ভাইবোনকে অনেক ভালবাসে, আদর-যত্ন করে। তারা মাঝে মাঝে আমাদেরকে যিশুর গল্প বলে। যিশুর গল্প আমাদের খুবই ভাল লাগে। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা একসাথে প্রার্থনা করি। সেদিন দু’টি বিষয় খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করলাম। প্রথমত: বাইবেলে যিশুর সেই কথা, “এ কথা আমি তোমাদের বলে রাখছি , তোমাদের মধ্যে দু’জন যদি এই পৃথিবীতে কোন-কিছুর জন্যে একমন হয়ে প্রার্থনা জানায়, তাহলে স্বর্গে বিরাজমান আমার পিতা তাদের সেই প্রার্থনা নিশ্চয় পূর্ণ করবেন; কেন না দু’তিনজন লোক আমার নাম নিয়ে যখন যেখানে মিলিত হয়, আমি সেখানেই আছি, তাদের মাঝখানেই আছি” (মথি ১৮: ১৯-২০)। দ্বিতীয়ত: ফাদার প্যাট্রিক পেইটনের কথাও মনে পড়লো- “যে পরিবার একত্রে প্রার্থনা করে, সেই পরিবার একত্রে থাকে।” আপনার পরিবার কী একত্রে আছে? পরিবারে প্রতিদিন কী একসাথে প্রার্থনা করেন?
৪। আমাদের আশে-পাশে অনেক পরিবার আছে, কিন্তু কয়টি পরিবার একত্রে আছে? যদি একত্রে না থাকে, তবে কেন একসাথে থাকতে পারছে না অথবা আমরা একসাথে থাকছি না কেন? আপনার পরিবারে কী প্রতিদিন প্রার্থনা হয়? মানুষ কে? কী তার পরিচয়? ভারতীয় দর্শন ও আধ্যত্মিকতায় মানুষ হল- দেহ+মন+আত্মা, এই তিনে পূর্ণ মানব সত্তা। আমরা দেহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রতিদিন কত খাবার গ্রহণ করি। মনের খাদ্যের জন্যে কত-কিছু করি, কত-কিছু দেখি, যেমন টিভি দেখা, সিনেমা দেখা, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাওয়াসহ আরো কত কী! আর আত্মার খাদ্য? আত্মার খাদ্যের জন্য আপনি প্রতিদিন কী কী করেন যেন আপনার আত্মা, আধ্যাত্মিক জীবন বেঁচে থাকে? মহাত্মা গান্ধী প্রার্থনার গুরুত্ব উপলব্ধি করে বলেছেন, “খাদ্য দেহের পক্ষে যত না গুরুত্বপূর্ণ, প্রার্থনা আমার পক্ষে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।” দেহের জন্য যেমন প্রতিদিন খাদ্য প্রয়োজন, তেমনি আত্মার জন্যেও আমাদের খাদ্য প্রয়োজন। “আত্মার খাদ্য হল প্রার্থনা।” প্রার্থনা হলো শান্তি লাভের ভূমিকাস্বরূপ এবং পূর্ণতাপ্রাপ্তির পথ। উপরে উল্লেখিত দু’টি পরিবারের চিত্র কেবলমাত্র আলাদাই নয়, কিন্তু ঠিক বিপরীত চিত্র বলা যায়। খ্রিস্টভক্ত হিসাবে আমাদের পরিচয় কীভাবে বহণ করে চলেছি? খ্রিস্টান মানে কী? খ্রিস্টের প্রতি যার আছে টান সেইতো প্রকৃত খ্রিস্টান। টান মানে আর্কষণ, আর তাই খ্রিস্টান মানে খ্রিস্টের প্রতি ভালবাসা, অনুরাগ, খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাস-ভক্তি, খ্রিস্টভক্তের প্রকৃত শক্তি। খ্রিস্টান মানে খ্রিস্টকেন্দ্রিক জীবন-যাপন করা, ব্যক্তি হিসাবে, পরিবারে ও সমাজে। কখনো কী ভেবে দেখেছেন, আমার আপনার জীবনের আসল শক্তির উৎস কী বা কোথায়? বিশপ ফুলটন জে, শীন বলেছেন, “জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে প্রার্থনার শক্তির চেয়ে এত শক্তিশালী ও এত সান্ত্বনাদায়ী আর কিছুই নেই।” প্রসিদ্ধ সঙ্গীতজ্ঞ ফ্রাঞ্জ জে, হেইডেন বলেছেন যে, “প্রার্থনার পর তিনি দেহ ও মনে এক নতুন তেজ ও শক্তি ফিরে পেতেন।”
৫। পবিত্র বাইবেল থেকে আমরা বৃদ্ধ বয়স ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বিষয়ে একটু পাঠ ও ধ্যান করি। পুরাতন নিয়মে রুথের কাহিনীতে বলা হয়েছে : “সে তোমার মধ্যে নতুন প্রাণের জোয়ার এনে দেবে, তোমার বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বনও হবে। কেন না তোমার এই যে বউমা, যে তোমাকে এত ভালবাসে, যার মূল্য তোমার কাছে সাত পুত্রের চেয়েও বেশি , সে-ই তো এই শিশুটির জন্ম দিয়েছে” (রুথ ৪:১৫)। আবার সামসঙ্গীতে বলা হয়েছে : “আমার বৃদ্ধ বয়সে, ওগো দূরে ঠেলে দিয়ো না আমায়; ক্রমে শক্তিহীন আমি! ওগো আমাকে পরিত্যাগ করো না” (সাম ৭১:৯)! পবিত্র বাইবেলের এই কথা আমাদের অন্তরে গ্রহণ ও ধারণ করলে, মানুষ হিসাবে আমি আপনি কেবলমাত্র দাদা-দাদী আর নানা-নানী নয়, কিন্তু কোন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রবীণ ব্যক্তিকে দূরে ঠেলে দিতে পারি না, পরিত্যাগ করতে পারি না। যোবের কাহিনীতেও আমরা লক্ষ্য করি এই কথা : “বৃদ্ধ যারা, তাদেরই অন্তরে প্রজ্ঞা থাকে, দীর্ঘাযু যারা, তাদেরই মধ্যে থাকে বুদ্ধি-বিচার” (যোব ১২:১২)। আরো বলা হয়েছে : “এখন পরিণত বয়স যাঁদের, বহু বছর কেটে গেছে যাঁদের, তাঁরাই বরং প্রজ্ঞার কথা বুঝিয়ে বলুন” (যোব ৩২:৭)। অনেক সময় সমাজে দেখা যায়, যুবারা বা যাদের বয়স কম, তাদের সাথে প্রবীণদের বা বৃদ্ধদের মধ্যে কেমন যেন একটা দূরত্ব, ফাঁক (distance & gap) বিদ্যমান থাকে। যুবাদের যেমন প্রবীণদের কাছ থেকে জ্ঞানের কথা, প্রজ্ঞার কথা শুনা প্রয়োজন, তেমনি প্রবীণদেরকে যুবাদের বুঝতে, গ্রহণ করতে ও কাছে টেনে নেওয়া প্রয়োজন রয়েছে যেন দিনে দিনে দূরত্ব কমে আসে এবং উভয় পক্ষ মিলেই পরিবারে, সমাজে ও মণ্ডলীতে সুন্দর গঠনমূলক ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস তার বাণীতে বলেন, “হে দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং প্রবীণ ব্যক্তিগণ, সমগ্র মণ্ডলী তোমাদের খুব কাছে আছে, আমাদের নিকটে রয়েছে, তোমাদের কথা মাতামণ্ডলী চিন্তা করে, তোমাদের কথা ভাবে, তোমাদের ভালবাসে এবং তোমাদেরকে পরিত্যাগ করতে চায় না, একা ফেলে রাখতে চায় না।” মণ্ডলী কোন দালান নয়, মণ্ডলী হল খ্রিস্টবিশ্বাসীভক্তের মিলন সমাজ, আমরাই মণ্ডলী। তাই আমরা যেন আমাদের দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং প্রবীণদেরকে ভালবাসি, তাদের কাছে থাকি এবং তাদেরকে কাছে রাখি, সর্বদা অন্তরে রাখি এবং সেবা-যত্ম করি। প্রবক্তা ইসাইয়ার গ্রন্থের এই কথাগুলো সকলকে আশ্বস্ত করে “তোমাদের বৃদ্ধ বয়সেও আমি তো সেই একই তিনি-ই থাকব; তোমাদের চুলে পাক ধরার পরেও তোমাদের ধরেই থাকব আমি। যা করার আমিই করেছি, এই আমিই তোমাদের করব বহন, এই আমিই ধরে রাখব, রক্ষাও করব” (ইসাইয়া ৪৬:৪)।