‘ভালোবাসা, প্রকৃতি ও ন্যায্য বাণিজ্যের সাথে ৫০ বছরের পথচলা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে রাজধানীর কে.আই.বি মিলনায়তনে কোর-দি জুট ওয়ার্কস্ কারিতাস বাংলাদেশ-এর একটি ট্রাস্ট) সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করে।
কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর চেয়ারপার্সন ও কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিয়ান রোজারিও’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি। গেস্ট অব অনার ছিলেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই। বিশেষ অতিথি ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও খুলনা ধর্মপ্রদেশের বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মাহবুবুর রহমান ও কোর-দি জুট ওয়ার্কস্ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের আজীবন সদস্য সিস্টার মেরী লিলিয়ান এসএমআরএ। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনকারী, অংশীজন, ক্রেতা প্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠানের কর্মীবৃন্দ ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত প্রতিনিধিগণসহ প্রায় ৮ শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ৯:৩০ মিনিটে আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর ছিল জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন উড়ানো ও শান্তির প্রতীক পায়রা উন্মুক্তকরণ, জুবিলী স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, বক্তব্যমালা ও মনোজ্ঞ সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর পরিচালক শিশির আঞ্জেলো রোজারিও সকলকে সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা জনিয়ে বলেন, ‘১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সদ্য স্বাধীন দেশে কারিতাস বাংলাদেশের একটি প্রকল্প হিসেবে কোর-দি জুট ওয়ার্কস-এর সূচনা। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও বিধবাদের জন্য আয়ের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিতে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ, উৎপাদন এবং রপ্তানীর মাধ্যমে এ সংস্থার যাত্রা শুরু। শুরু থেকে এই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি নিবেদিতভাবে কাজ করছে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নারী, প্রতিবন্ধী এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য।
প্রধান অতিথি জনাব গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার; কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘নির্যাতিত, স্বামীহারা, সামাজিকভাবে নিগৃহীত, অসহায়, দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টিতে ও তাদের ভাগ্যোন্নয়নে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাটজাত হস্তশিল্প উৎপাদন ও তা বিদেশে রপ্তানী করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। তাই আমি কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর প্রশংসা করি। সংস্থা এ উদ্যোগের মাধ্যমে বিগত ৫০ বছরে প্রায় ৬০০০ নারীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য যে সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে তা জেনে খুশি হয়েছি। কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর পথ অনুসরণ করে আরো অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসবেন এ প্রত্যাশা করি।’
গেস্ট অব অনার আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই, কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর সুবর্ণজয়ন্তীতে বলেন, কোর-দি জুট ওয়ার্কস্ উৎপাদনকারীদের কল্যাণে, ন্যায্য বাণিজ্যের অনুশীলনে এবং ক্রেতাদের চাহিদা মূল্যায়নে সর্বদা আন্তরিক। অসংখ্যা দরিদ্র পরিবার এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে পারিবারিক স্বচ্ছলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। কোর-দি জুট ওয়ার্কস দরিদ্রদের সরাসরি খাবার কিনে দেয়নি, তবে খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ তৈরি করে দিয়েছে। তাদের ক্ষমতায়ন করেছে। কোর-দি জুট ওয়ার্কসের সাথে যুক্ত সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আরও বলেন, কারিতাস মানুষকে মর্যাদা দেওয়ার শিক্ষা দেয়।
কোর-দি জুট ওয়ার্কস-এর চেয়ারপার্সন ও কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিয়ান রোজারিও বলেন, কোর-দি জুট ওয়ার্কস ন্যায্য বাণিজ্যের ‘দশটি মানদণ্ড’ বজায় রাখার লক্ষ্যে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং চমৎকার মানের কারুশিল্প পণ্য রপ্তানী নিশ্চিত করে তার দীর্ঘ যাত্রা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃতিগতভাবেই পণ্যগুলো পরিবেশ বান্ধব। ন্যায্য মূল্য এবং সময়ানুগ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকার ভিত্তি হিসেবে শক্তি যুগিয়েছে। তিনি কোর-দি জুট ওয়ার্কস্ এর উৎপাদনকারীণী, কর্মী ও ক্রেতাসহ সকল অংশীজনদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
সুমন কোড়াইয়া