ঢাকার আর্চবিশপ ভবনের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উদযাপন

বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও সেবার যাত্রাপথে ঢাকায় শতবর্ষী আর্চবিশপ ভবন” শিরোনামে ১৭ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, মহাসমারোহে এবং ভাবগাম্ভীর্যময় পরিবেশে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের রমনায় অমলোদ্ভবা মারীয়া’র ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে উদযাপিত হলো আর্চবিশপ ভবনের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আর্চবিশপ বিজয় এনডি’ক্রজ, ওএমআই, কার্ডিনাল প্যাট্টিক ডি’ রোজারিও সিএসসি, বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী, বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, অবসরপ্রাপ্ত বিশপ থিওটোনিয়াস গমেজ, মাননীয় সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং, সংরক্ষিত মহিলা আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, ফাদার, ব্রাদার, সিস্টার এবং গণ্যমান্য অতিথীসহ প্রায় ২৫০০ জন খ্রিস্টভক্ত।

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি, আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই কর্তৃক জাতীয় ও জুবিলী পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত ও কবুতর অবমুক্তকরণে মধ্য দিয়ে শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় ।

স্বাগত বক্তব্যে আর্চবিশপ বিজয় এনডি’ক্রুজ বলেন, “শতবর্ষের এই জয়ন্তী উৎসব আমাদের সকলের জন্যেই অনেক আনন্দময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের খ্রিষ্টবিশ্বাসের যাত্রাপথে কত স্মৃতি শ্রুতি বিজড়িত এই উৎসবটি। এটি একটি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর মাহেন্দ্রক্ষণ ও প্রেরণা দানকারী একটি শুভ মুহূর্ত যা ভবিষ্যতের জন্য দিশারী হয়ে থাকবে।”

মহাখ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই, সহার্পিত খ্রিস্টযাগে তাকে সহায়তা করেন কার্ডিনাল প্যাট্টিক ডি’ রোজারিও সিএসসি, অন্যান্য বিশপ ও ফাদারগণ। সহভাগিতায় তিনি বলেন, “ঢাকা মহামধর্মপ্রদেশ বাংলাদেশ কাথলিক ম-ণ্ডলিীর মাতৃধর্মপ্রদেশ। এই মহাধর্মপ্রদেশ থেকেই পর্যায়ক্রমে জন্ম হয় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট ধর্মপ্রদেশ। “আজকের এই শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আমি কন্যা ধর্মপ্রদেশ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট তথা বাংলাদেশের সকল খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। একই সাথে জয়ন্তী উৎসবের অনুগ্রহ ধারা আমাদের সকলের উপর বর্ষিত হোক।”

তিনি আরও বলেন “এই ভবন শুধু একটি ভবন নয়, এই ভবন থেকে অত্র অঞ্চলে খ্রিষ্টের বাণী প্রচারিত হয়েছে। এই ভবনে যে সমস্ত বিশপ, আর্চবিশপগণ থেকেছেন তাদেরকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।”

খ্রিস্টযাগ শেষে শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উপলক্ষে বিশেষ স্মরণিকা ‘শতবর্ষী’র মোড়ক উন্মোচন এবং কেক কাটেন কার্ডিনাল, আর্চবিশপ ও অন্যান্য অতিথিবর্গ। আর্চবিশপ ভবনের ইতিহাস নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র ‘ বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও সেবাকর্মের বাতিঘর ঢাকার আর্চবিশপ ভবন’ প্রদর্শিত হয়। বিকালে জুবিলীর উপর দিক নির্দেশনামূলক সহভাগিতা করেন মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি।

তিনি বলেন, ম-লীতে সেবা করার ক্ষেত্রে দুটো দিক রয়েছে মানবিক এবং ঐশ^রিক। এই ভবনটি যখন স্থাপনা করা হয়েছিল তখন আশীর্বাদের ফলে এটি শুধু জাগতিক ভবন নয় হয়েছিল ঐশরিক নিদর্শন। এই ভবনে থেকে যারা বিভিন্ন সেবা কাজ করে গেছেন তাদেরকে শুধু স্মরনই করি না প্রণিপাত করি, শ্রদ্ধা জানাই ।

ফাদার প্রশান্ত থিওটোনিয়াস রিবেরু তার সহভাগিতায় আর্চবিশপ হাউজের প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা এবং এর সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরেন।

বিশপ থিওটোনিয়াস গমেজ বলেন, এ দালানটি শতবর্ষ পার করেছে। মনে করি আরও একশ বছর টিকে থাকবে। দালানের মত আমাদের বিশাসের জীবন যাপন করা উচিৎ যা অনেকদিন টিকে থাকবে।

ফাদার আবেল বি. রোজারিও তার স্মৃতিচারণায় তুলে ধরেন ছোটবেলা থেকে যেভাবে এই ভবনটিকে তিনি দেখেছেন। তিনি সেমিনারীয়ান হিসেবে এই ভবনে থাকাকালীন বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরেন ।

ফাদার ফ্র্যাংক কুইলিভেন, সিএসসি এই ভবনের এবং এখানে বাস করা বিভিন্ন বিশপ এবং ফাদারদের সাথে বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরেন।

মি জেরাল্ড রড্রিক্স বলেন, তিনি সেমিনারীয়ান হিসেবে এই ভবনে থেকেছেন এর সাথে জড়িয়ে আছে তার অনেক স্মৃতি।

মিসেস হেলেন রোজারিও তার সহভাগিতায় বলেন, তিনি তার ছোটবেলা থেকেই এই ভবনের সাথে জড়িত। বিশেষ করে কলেজে থাকাকালীন ধর্মপল্লীর বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই ভবন এবং এখানে বসবাসরত প্রয়াত বিশপ ফাদারদের কথা তিনি স্মৃতিচারন করেন।

এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে ভাটিকান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মন্সিনিয়র মারিনকো আন্তনোভিচ।

জুবিলী অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী ফাদার আলবার্ট টমাস রোজারিও সবাইকে সার্বিক সহযোগীতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, বিশেষভাবে বৈরি আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও এত মানুষের উপস্থিাতির জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।

এরপরই ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে জুবিলী অনুষ্ঠানের ইতি টানা হয়।

-সজল বালা