চড়াখোলার ‘বইয়ের ডাক’ এর অমর একুশের বই মেলা

প্রতিবেশী ডেস্ক : গত কিছু বছরের ধারাবাহিকতায় এবছরও ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বই মেলার আয়োজন করেছে চড়াখোলার ‘বইয়ের ডাক’ আন্দোলন। ‘বইয়ের ডাক’ এর আয়োজনে ও প্রতিবেশী প্রকাশনীর সার্বিক সহযোগিতায় গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার তুমিলিয়া ইউনিয়নের চড়াখোলা গ্রামে ফাদার উইস্ স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এই বই মেলা। বই মেলার শুরুটা হয় পবিত্র খ্রিস্টযাগের মধ্যদিয়ে। সকাল ৯টায় রবিবাসরীয় খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু। তাকে সহযোগিতা করেন তুমিলিয়া ধর্মপল্লীর সহকারী পুরোহিত ফাদার লিয়ন রোজারিও। খ্রিস্টযাগের শেষে স্কুলের মাঠ প্রাঙ্গণে সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বইমেলার উদ্বোধন হয় ফিতা কাটার মধ্যদিয়ে। এই পর্বে উপস্থিত ছিলেন খ্রীষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ও সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু, কালিগঞ্জ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শর্মিলী রোজারিও, তুমিলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর  বাক্কু, আসন্ন ইউনিয়ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হারুনুর রশীদ টিপুসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উদ্বোধনের পর মাঠের সবগুলো স্টল বই বিক্রির জন্যে উন্মোচিত হয় আর পাঠকগণ যে যার চাহিদা মত বইয়ের স্টলে ভিড় জমাতে শুরু করে। যথার্থ সম্মান ও গাম্ভীর্যের সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, অতিথিবৃন্দ ও আপামর জনগণ দলে দলে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন। এরপর থাকে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিবৃন্দদের আসন গ্রহণ ও বক্তব্য প্রদান। আসন গ্রহণ পর্বে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে তাদের সামনে এনে আসন দেয়া হয় ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তুমিলিয়া ধর্মপল্লীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার অরুণ কস্তা, বরুণ কস্তা, আদম ও রিচার্ড গমেজ এবং নাগরী ধর্মপল্লীর সন্তোষ রড্রিক্স। এছাড়াও অতিথি হিসেবে আসন গ্রহণ করেন তুমিলিয়ার পালপুরোহিত ফাদার আলবিন গমেজ, সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু, তুমিলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বক্কর বাক্কু, আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হারুনুর রশীদ টিপু, চড়াখোলা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট কমল গমেজসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা। অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর বইয়ের ডাক এর আহ্বায়ক প্রণব কস্তা প্রারম্ভিক বক্তব্যে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য, ভাষার গুরুত্ব, বইয়ের ডাকের কর্মকাণ্ডের কথা সকলের কাছে তুলে ধরেন। সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় বইয়ের ডাকের এমন ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম প্রশংসনীয় ও সাধুবাদ পাবার যোগ্য। তাদের এমন কার্যক্রম আমাদের সমাজকে বই পড়তে আরো বেশি উৎসাহিত করবে। বই থেকে আমরা যে আলো লাভ করি তা অন্যের সাথে সহভাগিতা করার মধ্য দিয়ে আমরা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি। বই পড়ার দৈন্যতা থাকলেও বইয়ের ডাকে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়ে আমরা জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে পারি। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শর্মিলী রোজারিও অমর একুশে এই ধরণের ব্যতিক্রমী আয়োজনের জন্য যুবকদেরকে ধন্যবাদ জানান। সকলস্তরের মানুষকে বই পড়তে অনুরোধ করেন তিনি। আর তুমিলিয়া ইউনিয়নের চেয়াম্যান আবু বক্কর বলেন, আমাদের এলাকায় আমাদের যুবসমাজের এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে আমি সত্যিই খুশি। আমি চাই এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক ও আমাদের সমাজকে আরো সমৃদ্ধ করুক। হারুনুর রশীদ টিপুও এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং এই বিশেষ অনুষ্ঠানে শরীক হতে পেতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। চড়াখোলা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট কমল গমেজ বলেন, বইয়ের ডাকের কার্যক্রমকে আরো প্রসারিত করার জন্যে ক্রেডিট সাহায্য করতে সর্বদা প্রস্তুত। বই প্রকাশনাসহ লেখালেখির জন্য আমরা সুদ বিহীন ঋণ দিতে প্রস্তত আছি। বক্তব্যের পরে শুরু হয় চড়াখোলা গ্রামের সন্তান প্রবাসী কবি সুবীর কাস্মীর পেরেরা’র ‘নতুন আলোয় রৌদ্র স্নান’ কাব্যগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন। মোড়ক উন্মোচন পর্বে অন্যান্য অতিথিদের সাথে উপস্থিত ছিলেন কবির পিতা আগষ্টিন পেরেরা। এরপর বইয়ের মেলায় দর্শক ও পাঠকরা ঘুরাঘুরি করেন।
বই মেলার পাশাপাশি থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তা শুরু হয় বিকাল ৪:৩০ মিনিটে। চড়াখোলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী ও গ্রামের শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করে। শত শত মানুষের উপস্থিতিতে চড়াখোলা স্কুল মাঠের প্রাঙ্গণে জাগে প্রাণের স্পন্দন। সন্ধ্যা ঘণ্টার পরে দূত সংবাদ প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শেষ হয় বই মেলার আয়োজন।

এবারের মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনীর বই নিয়ে পসরা সাজায় মোট ৮টি স্টল। তবে ছোটদের বই অনেকেই খুঁজতে থাকে, যার ঘাটতি ছিল এই মেলায়। আয়োজক বইয়ের ডাক ভবিষ্যতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেণ। তবে উল্লেখ্য ‘বইয়ের ডাক’ একটি আন্দোলন কোন সংগঠন নয়। এর সাথে জড়িত যারা তারা সবাই বইসেবক। মাত্র ৫জন উদ্যমী যুবক-যুবতীর সৃজনশীলতায় ও কিছু উদারমনা ব্যক্তিদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত ‘বইয়ের ডাক’ এর বিস্তৃতি ধীরে-ধীরে বাড়ছে। আসুন নিজে বই পড়ি, অন্যকে পড়তে উদ্বুদ্ধ করি।