Categories সংবাদ

প্রিয় ভাই-বোনেরা,

বিশপদের সভার ষোড়শ সাধারণ সমাবেশের প্রথম পর্বের কার্যক্রমসমূহের সমাপ্তিলগ্নে, আমরা সকলে যে সুন্দর ও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতায় বাস করেছি তার জন্য আপনাদের সকলের সঙ্গে আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনাদের সকলের সঙ্গে আমরা গভীর মিলন-বন্ধনে এই আশীর্বাদিত সময় যাপন করেছি।  আমরা আপনাদের প্রার্থনার সমর্থন পেয়েছি, আমরা আপনাদের প্রত্যাশা, আপনাদের প্রশ্নসমূহ বহন করেছি আর সেইসাথে আপনাদের সাথে আপনাদের ভীতিও ধারণ করেছি। দুই বছর পূর্বে পোপ ফ্রান্সিস যেমনটা অনুরোধ করেছিলেন, সেই অনুযায়ী শ্রবণ ও নির্ণয়নের একটা দীর্ঘ প্রকৃয়ার এবং পবিত্র আত্মার পরিচালনায় “একসঙ্গে যাত্রার” উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, যা সকল ঐশজনগণের জন্যই উন্মুক্ত ছিল, কেউই বাদ পড়েনি।  এই ঐশ জনগণ হলো যিশু খ্রিস্টকে অনুসরনে যুক্ত প্রেরণকর্মের শিষ্যদল।

যে সভায় আমরা ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রোমে মিলিত হয়েছি তা এই প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নানান দিক থেকে এটা ছিল একটা অভূতপূর্ণ অভিজ্ঞতা। প্রথমবারের মতো, পোপ ফ্রান্সিসের আমন্ত্রণে একই টেবিলে বসতে খ্রিস্টভক্ত নর-নারীগণ তাদের দীক্ষাস্নানের গুণে নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন যেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারেন, আর তা শুধুমাত্র আলোচনায় অংশগ্রহণ নয় বরং বিশপদের সিনডের এই সভার ভোট প্রকৃয়ায়ও অংশগ্রহণের জন্য। আমাদের আহ্বান, আমাদের ক্যরিজম ও আমাদের সেবাকর্মের পরিপূরক হিসেবে, আমরা একত্রে গভীরভাবে ঐশবাণী ও একে অপরের অভিজ্ঞতা গভীরভাবে শ্রবণ করেছি। পবিত্র আত্মার পদ্ধতি অবলম্বন করে আমরা প্রতিটি মহাদেশ থেকে আমাদের সমাজের সম্পদ ও দরিদ্রতা নম্রভাবে সহভাগিতা করেছি আর এর মধ্যদিয়ে আমরা আবিষ্কার করতে চেয়েছি পবিত্র আত্মা মণ্ডলীকে আজ কী বলতে চান। এভাবে আমরা ল্যাটিন ঐহিত্য ও প্রাচ্য খ্রিস্ট মণ্ডলীর ঐতিহ্যের মধ্যকার পারস্পরিক বিনিময় এগিয়ে নেয়ার গুরুত্বও  অভিজ্ঞতা করেছি ।  অন্য মণ্ডলী ও মাণ্ডলিক সমাজের ভ্রাতৃপ্রতীম প্রতিনিধিবর্গের অংশগ্রহণ আমাদের আলাপ-আলোচনাকে গভীরভাবে সমৃদ্ধ করেছে।

আমাদের সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি বৈশ্বিক সংকটের পটভূমিতে, যার ক্ষত এবং কলঙ্কজনক বৈষম্য আমাদের হৃদয়ে নিদারুণভাবে অনুরণিত হয়েছে এবং আমাদের কাজে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে, বিশেষভাবে যেহেতু আমাদের মধ্যকার কয়েকজন সেইসব স্থান থেকে এসেছেন যেখানে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ভয়াবহ হানাহানির শিকার জনগণের জন্য প্রার্থনা করেছি; আমরা সেইসব মানুষদের কথাও ভুলে যাইনি যারা দুর্দশা ও দূর্নীতির দ্বারা তাড়িত হয়ে অভিবাসনের ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছেন। আমরা সারা পৃথিবীর সেইসব নর-নারীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি ও সৌহার্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যারা ন্যায্যতা ও শান্তি স্থাপনে কাজ করছে।

পোপ মহোদয়ের আমন্ত্রণে, আমরা নীরবতার জন্য যথেষ্ট স্থান রেখেছিলাম যেন পারস্পরিক শ্রবণ ও পবিত্র আত্মার প্রেরণায় আমাদের মধ্যকার মিলনের প্রত্যাশা বৃদ্ধি করা যায়। প্রারম্ভিক আন্ত:মাণ্ডলিক সান্ধ্যপ্রার্থনার সময়ে, আমরা অভিজ্ঞতা করেছি কিভাবে ক্রুশবিদ্ধ খ্রিস্টকে নিয়ে নীরব মনন আমাদের মধ্যে একতার তৃষ্ণাকে বাড়িয়ে তোলে। বাস্তবিক, ক্রুশই হলো আমাদের প্রভুর একমাত্র সিংহাসন যিনি জগতের পরিত্রাণের জন্য নিজেকে দান করে দেয়ার পর তাঁর শিষ্যদেরকে পিতার কাছে ন্যাস্ত করেন যেন তারা “সকলে এক হতে পারে”(যোহন ১৭:২১)। খ্রিস্টের পুনরুত্থানে অর্জিত আশায় দৃঢ়ভাবে এক হয়ে আমরা আমাদের সকলের বসতবাটিকে তাঁর কাছে ন্যাস্ত করি যেখানে পৃথিবী ও দরিদ্রদের কান্না ক্রমাগত জরুরী হয়ে পড়ছে: “ঈশ্বরের প্রশংসা হোক,  যেমনটা পোপ ফ্রান্সিস আমাদের কাজের শুরুতে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। 

দিনে দিনে আমরা আমরা আরো গভীরভাবে পালকীয় ও প্রৈরিতক মন-পরিবর্তনের আহ্বান অনুভব করছি। কেননা মণ্ডলীর আহ্বান হলো মঙ্গলবাণী ঘোষণা করা, আর তা নিজের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ না রেখে বরং অপরিসীম ভালোবাসার সেবায় নিজেকে স্থাপন করার মধ্যদিয়ে, যে ভালোবাসায় ঈশ্বর জগতকে ভালোবেসেছেন (দ্র: যোহন ৩:১৬)। সাধু পিতরের চত্তরের কাছে গৃহহীন জনগণের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল এই সিনড উপলক্ষে মণ্ডলীর বিষয়ে তাদের প্রত্যাশা কী, তখন তার উত্তর দিয়েছিল: “ভালোবাসা!” মণ্ডলীর হৃদয়-গভীরে সর্বদা এই ভালোবাসা অবশ্যই থাকতে হবে, যা হলো ত্রিত্বীয় ও খ্রিস্টপ্রসাদীয় ভালোবাসা” যেমনটা পোপ ফ্রান্সিস বালক যিশুর ভক্তা সাধ্বী তেরেজার বাণী স্মরণ করে গত ১৫ অক্টোবর, সমাবেশের মধ্যবর্তী সময়কালে উল্লেখ করেছেন। এটা হলো “আস্থা” যা আমাদের মনোবল দান করে ও অন্তরস্থ স্বাধীনতা দান করে। আমরা তা অভিজ্ঞতা করেছি, দ্বিধা না করেই স্বাধীনভাবে ও নম্র হয়ে আমরা আমাদের মিল, অমিল, আকাঙ্খা ও প্রশ্ন ব্যক্ত করেছি।    

আর এখন? আমরা আশা করি যে অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে এগিয়ে যেতে সামনে যে মাসগুলো রয়েছে সেখানে “সিনড” শব্দটিতে যে প্রেরণমূলক মিলনের  প্রত্যেকে সুনির্দিষ্টভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এটা আদর্শবাদের বিষয় নয়, কিন্তু প্রৈরিতিক ঐহিত্যে প্রোথিত এক অভিজ্ঞতার বিষয়। এই প্রক্রিয়ার শুরুতে পোপ ফ্রান্সিস যেমনটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, “মিলন ও প্রেরণকর্ম শুধুমাত্র তত্ত্বগত কিছু একটা হয়ে পড়ে থাকার ঝুঁকি রয়েছে, যদি না আমরা সকলের পক্ষ থেকে প্রকৃত অংশগ্রহণ উৎসাহিত করে এটাকে মণ্ডলীর একটি চর্চার মধ্যে পরিচর্যা করি যা সিনডীয় যাত্রার সুনির্দিষ্টতাকে প্রকাশ করে” (অক্টোবর ৯, ২০২১)। এতে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ ও অগনিত প্রশ্ন রয়েছে: প্রথম সেশনের সন্নিবেশিত রিপোর্ট সেইসব দিকগুলোকে সুনির্দিষ্ট করবে যেখানে আমরা ঐক্যমতে পৌছেছি; এটা উন্মুক্ত প্রশ্নসমূহে আলোকপাত করবে, আর আমাদের কাজ কিভাবে এগিয়ে যাবে সে নির্দেশনা দেবে।

নির্ণয়নে এগিয়ে যাবার জন্য দরিদ্র থেকে শুরু করে সবার কথা শোনা একান্তভাবে প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজন পথ পরিবর্তন যা প্রশংসারও একটি পথ: “হে পিতা, হে স্বর্গ-মর্তের প্রভু, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ এই সবকিছু তুমি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানদের কাছ থেকে গোপন রেখেছি, আর ছোট শিশুদের কাছে তা প্রকাশ করেছ (লুক ১০:২১)! এর অর্থ হলো সমাজে যাদের কথা বলার অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে বা যারা নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করে, এমনকি মণ্ডলীর কাছ থেকেও, তাদের কথা শোনা; যারা সকল প্রকার বৈষম্যের শিকার তাদের কথা শোনা- বিশেষকরে কোন কোন অঞ্চলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য যাদের সংস্কৃতিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। সর্বোপরি, বর্তমান সময়ের মণ্ডলীর একটি কর্তব্য হলো পরিবর্তনের চেতনায় তাদের কথা শ্রবণ করা যারা মণ্ডলীর সদসদের কারা অপব্যবহারের স্বীকার হয়েছেন, এবং মণ্ডলী যেন নিজেকে সুনির্দিষ্টভাবে ও কাঠামোগতভাবে নিয়োজিত হয় যা এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হওয়া নিশ্চিত করবে।   

মণ্ডলীর প্রয়োজন ভক্তজনগণ, নর-নারীর কথাও শোনা যারা সকলেই তাদের দীক্ষাস্নানের গুণে পবিত্রতায় আহুত হয়েছে: ধর্মশিক্ষকদের স্বাক্ষ্য শোনা, অনেক পরিস্থিতিতে তারাই হলেন মঙ্গলসমাচারের প্রথম ঘোষক; ছোট ছেলেমেয়েদেয় সরলতা ও প্রাণবন্ততা, যুবাদের উদ্দীপনা, তাদের প্রশ্ন আর তাদের অনুনয় শ্রবণ করা; প্রবীণদের স্বপ্ন, তাদের প্রজ্ঞা ও তাদের স্মৃতি শ্রবণ করা; মণ্ডলীর প্রয়োজন পরিবারের কথা শোন, তাদের সন্তানদের শিক্ষাদানের ভাবনা, জগতে তারা যে খ্রিস্টীয় সাক্ষ্য প্রদান করছে তা শ্রবণ করা। মণ্ডলীর প্রয়োজন তাদের কণ্ঠস্বরকেও আমন্ত্রণ জানানো যারা ভক্তজনগণের জন্য নির্ধারিত সেবাকর্মে এবং নির্ণয়নে ও সিন্ধান্ত গ্রহণের কাঠামোতে জড়িত হতে চান।

সিনডীয় নির্ণয়ন প্রক্রিয়ায় আরো অগ্রসর হওয়ার জন্য মণ্ডলীর বিশেষভাবে প্রয়োজন হলো অভিষিক্ত সেবাকর্মীদের কথা ও অভিজ্ঞতা জড়ো করে আনা: যাজকগণ, যারা বিশপদের পাথমিক সহযোগী, যাদের সংস্কারীয় সেবাকাজ সমগ্র ভক্তমণ্ডলীর জীবনের জন্য অপরিহার্য; ডিকনগণ যারা দুর্বলতমদের প্রতি তাদের সেবাকর্মের মধ্যদিয়ে সমগ্র মণ্ডলীর যত্নশীলতাকে তুলে ধরে। মণ্ডলীর আরো প্রয়োজন সন্যাসব্রতী জীবনের প্রাবক্তিক কণ্ঠস্বরের দ্বারা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে দেওয়া। ম-লীর আর মণপ্রয়োজন তাদের প্রতিও মনযোগী হওয়া যারা একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী নন কিন্তু তারা সত্যের অনুসন্ধানী এবং যাদের মধ্যে পবিত্র আত্মা “নিস্তার-রহস্যের অংশীদার হওয়ার সুযোগ দান করেন” (বর্তমান জগতে খ্রিস্টমণ্ডলী ২২, ৫), তিনি বিদ্যমান ও সক্রিয়। 

“আমরা যে জগতে বাস করছি, যে জগতকে আমরা মতভেদ সত্ত্বেও ভালোবাসতে ও সেবা করতে আহুত, এই জগত দাবী করে যে মণ্ডলী যেন তাঁর প্রেরণকর্মের সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরো শক্তিশালী করে। সিনডীয় যাত্রার ঠিক এই পথটাই ঈশ্বর মণ্ডলীর কাছ থেকে এই তৃতীয় সহহ্রাব্দে প্রত্যাশা করছেন” (পোপ ফ্রান্সিস, অক্টোবর ১৭, ২০১৫)।  এই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য আমাদের ভীত হওয়ার প্রয়োজন নেই। মণ্ডলীর মাতা মারীয়া, যিনি যাত্রাপথের শুরুতে রয়েছেন তিনি আমাদের তীর্থযাত্রায় সহযাত্রা করেন। আনন্দ ও বেদনায়, তিনি তার পুত্রকে প্রদর্শন করেন এবং আমাদেরকে আস্থা রাখার জন্য আহ্বান জানান। আর যিশু খ্রিস্ট হলেন আমাদের একমাত্র আশা।

ভাটিকান সিটি, অক্টোবর ২৫, ২০২৩

 

ভাষান্তর: ফাদার তুষার জেমস গমেজ