বিশ্বস্ত, পরিশ্রমী ও নিঃস্বার্থপর কর্মী প্রয়োজন
১ মে সর্বজনীনভাবে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। শ্রমজীবী মানুষের প্রতি ভালবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর সাথে সাথে বিশ্বের খেটে খাওয়া মানুষের অবদানকেও স্বীকার করা হয়। শ্রমিকেরা আছে বলেই পৃথিবী চলমান। এ জগতে আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে শ্রমিক। কেউ দায়িত্বপূর্ণ কাজ দায়সারা ভাবে করে আবার কেউ নগণ্য কাজ দরদ দিয়ে করে। তবে যার যার কাজে বিশ্বস্ত ও সৎ থেকে আমরা বিশ্বের মঙ্গল ও কল্যাণ করতে পারি। শ্রমিকদেরকে পরিশ্রমী ও বিশ্বস্ত হয়ে ওঠার জন্য নীরবকর্মী ও পরিশ্রমী সাধু যোসেফকে শ্রমিকদের প্রতিপালক হিসেবে উপহার দেওয়া হয়েছে।
একেকজনকে একেক কাজ করার জন্য ঈশ্বর আহ্বান করেন। কিন্তু কখনো কখনো একজনকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজ করার আহ্বান করেন ঈশ্বর। তবে ঈশ্বর সবাইকেই আহ্বান করেন। আর সে আহ্বান বুঝে সাড়াদান করাই একজন ব্যক্তির সাহসিকতার পরিচয়। বর্তমান করোনাভাইরাসের বিভীষিকাময় সময়ে স্বাস্থ্যসেবাকারী, পুলিশ-সেনা, মিডিয়াকর্মীরা তাদের প্রতি যে আহ্বান তাতে বিশ্বস্থ থেকে মানুষের জীবন রক্ষা করতে যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে প্রকাশ করছেন। এ বিপদসংকূল অবস্থায় যারা মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যায় তারাই ঈশ্বর সন্তান। এমনিভাবে সবসময় ঈশ্বরের বাণী ও খ্রিস্টের ভালবাসাকে সমস্ত জগতে ছড়িয়ে দেবার জন্য কিছু নারী-পুরুষকে ঈশ্বর আহ্বান করেন। তবে সে আহ্বানে একজন ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয়ক্ষেত্রেই স্বাধীনভাবে সাড়া দিতে পারেন। তবে ঈশ্বর সকলকে তাঁর আনন্দময় জীবনের সঙ্গী হতে আহ্বান করেন। মাণ্ডলীক উপাসনা বর্ষে পুনরুত্থান কালের চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় বিশ্ব আহ্বান দিবস। এ বছর তা পালিত হবে মে ৩ তারিখে। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে দিবসটি ঘটা করে পালিত না হলেও সকলের জন্য ঐশ আহ্বান কিন্তু সর্বদাই বিদ্যমান। কিন্তু আমরা পার্থিব সুখে এবং সাংসারিক কাজে এতই নিমগ্ন থাকি যে, ঈশ্বরের আহ্বান শুনতে পাই না। অথবা শুনেই অবহেলায়, প্রলোভনে পড়ে অন্তর থেকে তা হারিয়ে ফেলি। ঈশ্বর যেমন তাঁর প্রিয় পুত্র যিশুকে বাণী প্রচারের জন্য অভিষিক্ত করেছেন তেমনিভাবে যিশুও চান আমরা যেন অভিষিক্ত হয়ে দীন দরিদ্রদের কাছে মঙ্গলবার্তা প্রচার করি। আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজস্ব আহ্বান আবিষ্কার করতে পারি আধ্যাত্মিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে। কেননা আমরা সকলেই আহূত প্রভুর সাক্ষ্য বাণী বহন করার জন্য। সরাসরি না পারলেও খ্রিস্টভক্তগণ তাদের ব্যক্তিগত কাজের মাধ্যমে, প্রার্থনায়, দানে, ত্যাগে ধর্মীয় জীবন আহ্বানে সহায়তা করতে পারে।
যাজকীয় ও উৎসর্গীকৃত জীবনে নব নব আহ্বানের জন্য প্রভুর কাছে অনুরোধ করতে হয় সবাইকে। মণ্ডলীতে বিদ্যমান প্রতিটি ধর্মপল্লীর সমাজ, সংগঠন এবং প্রার্থনার দলগুলোও আহ্বান বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা ও কাজ করবে। ভক্তগণ প্রার্থনা করবে যাতে তাদের যাজক ও সন্ন্যাসব্রতীগণ মঙ্গলসমাচারের প্রেমে প্রজ্জ্বলিত হয়ে ঈশ্বরের দয়াপূর্ণ ভালবাসার জীবন্ত নিদর্শন হতে পারেন। যাজকীয় ও ব্রতীয় জীবনের সৌন্দর্য ও পূর্ণতা হলো বাধ্যতা, কৌমার্য ও দরিদ্রতার মধ্যে। শুধু এ ব্রতগুলো পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তা যাপন করতে হবে। বর্তমান সময়ের বস্তুবাদ, ভোগবাদ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার মধ্যে জীবনযাপন করার ফলে যাজকীয় ও ব্রতীয় জীবনের আহ্বান সব দেশেই কমে আসছে। আমাদের দেশে যাজকপ্রার্থীসহ ব্রতীয় জীবনের জন্য প্রার্থীদের সংখ্যা সন্তোষজনক হলেও গুণগত মান ও নিবেদনের মনোভাবটা নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করার সময় এখনই। নিঃস্বার্থ সেবাদানে আরো যেমনি নিবেদিত হতে হবে তেমনি বর্তমান বাস্তবতায় বাণীপ্রচারে আরো পরিশ্রমী ও সৃজনশীল হতে হবে বর্তমান সময়ের যাজক ও উৎসর্গীকারী জীবনব্রতীদের।
সমাজ, দেশ ও মণ্ডলী গঠনে সবার শ্রম রয়েছে। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করি দেশ ও জাতির জন্য শ্রমিকদের সকল অবদান। দেশের ও প্রবাসের সকল শ্রমজীবী মানুষ নিরাপদে ও শান্তিতে থাকুক। শ্রমিকদের প্রতিপালক সাধু যোসেফ তাদের মঙ্গল করুন।