উত্তম মেষপালক যিশুর আদর্শে পিতামাতারাও গৃহমণ্ডলীর পালক হয়ে উঠুক

পুনরুত্থানকালের চতুর্থ রবিবার ( উত্তম মেষপালকের পর্ব ও বিশ্ব আহ্বান দিবস) উপলক্ষে

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি – এর উপদেশ বাণী

 

মঙ্গলসমাচারে যিশু বলেন: “আমি আপনাদের সত্যি সত্যি বলছি, আমি যেন মেষের সেই ঘেরির দরজা” (যোহন ১০:৭)। এই পাঠের পরবর্তী অংশে যিশু আবার বলেন: আমি প্রকৃত মেষপালক! … আমি আমার মেষগুলিকে জানি আর আমার মেষগুলিও আমাকে জানে। .. আমার মেষগুলির জন্য আমি নিজের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছি।” (যোহন ১০:১১)

প্রিয়জনেরা, আজ পুনরুত্থানকালের চতুর্থ রবিবার। এই রবিবারটি “উত্তম মেষপালকের রবিবার” বলেও পরিচিত।  তাছাড়া কাথলিক বিশ্বমণ্ডলীতে এই দিনটি “আহ্বান দিবস” রূপে পালিত হচ্ছে।  এই দিনে আমরা মণ্ডলীর “পালক”দের কথা স্মরণ করি যারা সেবাকারী যাজক। সেই যাজকীয় জীবনে আহ্বানের জন্যও আমরা আজ প্রার্থনা করি। এই দিনে বিশেষভাবে আমরা তাদের কথাও স্মরণ করি যারা যাজকীয় জীবনে আহ্বানের জন্য বিভিন্ন সেমিনারীতে ও গঠনগৃহে যাজক-প্রার্থীরূপে শিক্ষা গ্রহণ করছে। তাদের গঠনের জন্য মণ্ডলীর প্রত্যাশা হল, যেন সকল ভক্তজনেরা যাজক-প্রার্থীদের জন্য প্রার্থনা করে এবং অর্থ দিয়ে তাদেরকে গঠনে সাহায্য করে।

যিশু আজকের মঙ্গলসমাচার পাঠে দুটো উপমা ব্যবহার করে নিজেকে দুইভাবে অভিহিত করেছেন: প্রথম: তিনি মেষের ঘেরির দরজা বা প্রবেশদ্বার, আর দ্বিতীয়: তিনি উত্তম মেষপালক। যখনই যিশু এই দুটো উপমা ব্যবহার করছেন তখন আমাদের কাছে এটাও ব্যক্ত করা হচ্ছে যে, আমরা যিশুর প্রিয় মেষপাল।  এই মেষপালের জন্য যিশুই একমাত্র মেষপালক, তিনিই মেষপালের প্রবেশদ্বার।

মেষপালের দরজারূপে, যিশুই শাশ্বত জীবনের প্রবেশপথ।  যিশুর পথের  অনুসারী আমরা, কেননা তিনিই “পথ, সত্য ও জীবন”। তাঁর মধ্য দিয়েই আমাদেরকে যেতে হবে, বিশ্বাসী হয়ে পথ চলতে হবে; তিনি আমাদেরকে চেনেন, জানেন এবং আমাদেরকে ভালবাসা ও যত্নে রাখেন। তিনি আমাদের নিরাপদে রাখেন, সকল প্রকার দুর্যোগ, মহামারী, সংকট, রোগশোক, সংক্রমণ ও মৃত্যু থেকে আমাদের সুরক্ষা করেন।

উত্তম মেষপালক হিসেবে যিশু আমাদের পরিচালনা দান করেন। বর্তমানের দুদিনে দুঃসময়ে, সামগীতিকারের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে, অনেক বিশ্বাস, ভরসা ও আশা ভরে আমরাও বলি:

প্রভু আমার রাখাল, আমার কিসের অভাব? সবুজ তৃণভূমিতে তিনি আমাদেরকে শুইয়ে রাখেন, আমাকে চরিয়ে নিয়ে যান শান্ত জলের তীরে; সঞ্জীবিত করেন আমার প্রাণ।  নিজের গৌরব প্রকাশ করতে তিনি আমায় ধর্মপথেই চালিত করেন।  ছায়াচ্ছন্ন গিরিসঙ্কট পার হতে গিয়েও কোন অমঙ্গলের ভয় করি না আমি; ওগো, তুমি যে সারাক্ষণ আমার সঙ্গেই রয়েছো! তোমার যষ্টি, তোমার পাঁচনী, এই তো আমার ভরসা।” (সামসঙ্গীত ২৩:১-৪)

উত্তম মেষপালক রবিবারে, আমরা প্রর্থনা করি তাদের জন্য যারা, সেবাকারী যাজক হয়ে উত্তম মেষপালক যিশুকে অনুসরণ করার জীবন বেছে নিয়েছেন। যিশুর নামে ও তাঁর হয়ে পালক হয়ে, যারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের মঙ্গল কামনা করি।  সকল পালক যেন যিশুর যাজকীয় দায়িত্ব পালন ক’রে নিজেকে ও মেষপালদের পবিত্র করতে পারে; যিশুর রাজকীয় দায়িত্ব পালন ক’রে মেষপালের সুন্দর পরিচালনা ও সেবা করতে পারে; এবং বিশ্বাসের শিক্ষাদান করে তারা যেন যিশুর প্রাবক্তিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

বিশ্বমণ্ডলীর আহ্বান দিবসে আমরা তাদেরকেও স্মরণ করি: যারা যাজক-প্রার্থীরূপে বর্তমানে সেমিনারী বা গঠন-গৃহে রয়েছে, তারা যেন যিশুর আহ্বান আবিষ্কার ক’রে, নিজেদের জীবন অর্পণ করার মনোবাসনায়, দিন দিন বৃদ্ধিলাভ করতে পারে।

উত্তম মেষপালক দিবসে আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করি খ্রিস্টীয় সকল পরিবারকে।  সেই সমস্ত পরিবারের নিকট আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, যে-পরিবার থেকে সন্তানেরা, ধর্মীয় ও যাজকীয় জীবনে প্রবেশ ক’রে মণ্ডলীর সেবায় ইতিমধ্যে নিয়োজিত আছেন, আর যারা প্রার্থীরূপে গঠন নিচ্ছে।

প্রতিটি খ্রিস্টীয় পরিবার হচ্ছে গৃহমণ্ডলী, যে মণ্ডলীতে সবাই খ্রিস্টেতে দীক্ষিত।  আবার, যারা দীক্ষিত -তারাই প্রেরিত।  গৃহমণ্ডলীর সবাই, বিশেষভাবে পরিবারের পিতামাতারা, যারা তাদের দীক্ষাস্নান ও বিবাহ সংস্কারের মধ্য দিয়ে, গৃহমণ্ডলীকে পবিত্র করার জন্য, পরিচালনা দান করার জন্য এবং ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার জন্য, আহ্বান ও দায়িত্ব পেয়েছেন। উত্তম মেষপালক যিশুর আদর্শে, গৃহমণ্ডলী অর্থাৎ পরিবারের পিতামাতাগণও সত্যিকারে পালক। তাই আমাদের প্রার্থনা, প্রতিটি গৃহমণ্ডলীর পালক হয়ে পিতামাতারাও যেন তাদের পারিবারিক মণ্ডলীর পালকীয় দায়িত্ব পালন করতে পারেন।  আমেন ॥