এ বছর ১২ এপ্রিল সারাবিশ্বে ‘পুনরুত্থান পর্ব’ উদযাপিত হবে। সারাবিশ্বে যেমনি তেমনি বাংলাদেশেও তা ‘ইস্টার সানডে’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। খ্রিস্টানদের জন্য তা অবশ্যই পালনীয় একটি পর্ব; যা দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে আনন্দোৎসবে পালিত হয়। কেননা এদিনে স্মরণ করা হয় মানব মুক্তিদাতা যিশু মৃত্যুকে জয় করে কবর থেকে উত্থিত হয়েছেন। যিশু মৃত্যুঞ্জয়ী। তবে মৃত্যুঞ্জয়ী হবার আগে যিশুকে নিদারণ মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে, হতে হয়েছে অবহেলিত, অবাঞ্চিত, পরিত্যক্ত, গ্রহণ করতে হয়েছে অন্যায় ও প্রহসনমূলক বিচার, সহ্য করতে হয়েছে মিথ্যা অপবাদ ও নিন্দা এবং শেষে ক্রুশীয় মৃত্যুর যন্ত্রণাও নিয়েছেন যিশু। এখানেই শুধু শেষ নয়, মৃত্যুর হিম শীতল স্পর্শের সাথে কবরের নিকষ কালো অন্ধকারের অভিজ্ঞতাও নিয়েছেন যিশু। তবে তিনি মৃত্যু ও অন্ধকারকে জয় করে পুনরুত্থিত হয়ে মানুষকে অভয় দিচ্ছেন ঈশ্বরের সাথে সংযুক্ত থেকে মানুষ অন্ধকারকে জয় করতে পারে।
কোন কিছুই যিশুর পুনরুত্থানে বাঁধা হয়ে থাকতে পারেনি। তবে জীবনের কঠিনতম বাস্তবতাগুলো মোকাবেলা করেই যিশু পুনরুত্থিত হয়েছেন। আর যিশুর পুনরুত্থান আমাদের সকল মানুষকে আশান্বিত করছে জীবনের কঠিনতা ও সংকট মোকাবেলা করে সফলতার দিকে এগিয়ে চলতে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব বর্তমানে অতীব সংকটময় সময় পার করছে। যার প্রভাব পড়েছে জীবনের সর্বস্তরে। শিক্ষা থেকে রাজনীতি, সমাজ থেকে ধর্ম; সবকিছুতেই করোনার বিরূপ প্রভাব। পুনরুত্থান উৎসবের জন্য বিশ্বাসীরা সংঘবদ্ধভাবে কোন কিছু করতে পারছে না। খ্রিস্টীয় জীবনের আধ্যাত্মিকতার পরম সময় পুণ্য সপ্তাহেও খ্রিস্টবিশ্বাসীরা সরাসরি উপাসনা করতে পারছে না। ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও যাজকেরা সরাসরি বৃহৎ পরিসরে যজ্ঞীয় ও সাক্রামেন্তীয় সেবা দিতে পারছেন না। তাই যাজক ও ভক্তজনগণ উভয়ের মধ্যেই রয়েছে ক্ষত ও কষ্ট। পুনরুত্থান পূর্ববর্তী যিশুর জীবনেও ছিল নিদারুণ কষ্ট ও ক্ষত। মানুষের মঙ্গলের জন্য যিশু তা গ্রহণ করেছিলেন। আমরাও মানুষের মঙ্গলের জন্য এ বিশেষ অবস্থাটা গ্রহণ করি। মানব জীবনের চরম শক্রু মৃতুকে জয় করে যিশু তাঁর ক্ষমতা মানব জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর সাথে একাত্ম হয়ে আমরাও মৃত্যুদূত করোনাভাইরাসকে জয় করার ক্ষমতা রাখি তা সুনিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি।
করোনাভাইরাসকে পরাজিত করার পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। যার যার মত করে কোন কোন দেশ এই ভাইরাসটির বিস্তার রোধ ও প্রতিষেধক তৈরির প্রচেষ্টা নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই মনে করছেন, করোনা জয়ে বিশ্বকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সত্যিই সমন্বিতভাবে কাজ করলেই বিজয়ী হওয়া যাবে। বাংলাদেশেও করোনার ছোবল তীব্র হচ্ছে। ভীত ও আতঙ্কিত না হয়ে তা মোকাবেলা করার জন্য সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। সরকার ও বেসরকারী সেক্টরগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এগিয়ে যেতে হবে। কঠিন হলেও আমাদেও তথাকথিত বাহাদুরি ও বদভ্যাসগুলো বাদ দিতে হবে। প্রত্যেকের ছোট ছোট ত্যাগস্বীকারের মধ্য দিয়ে আমরা একজন আরেকজনকে বেঁচে থাকতে সহযোগিতা করতে পারি। পুনরুত্থানের কিছু পূর্বাবাস আমরা এই সময়ে দেখতে পাচ্ছি। যিশুর মত অপরের মঙ্গলের জন্য বা অন্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কেউ কেউ নিজেকে দান করছেন। কেউ রোগিকে সরাসরি চিকিৎসা দিয়ে, কেউ নিরাপত্তা দিয়ে আবার কেউ খাদ্য যোগান দিয়ে নিজেকে দান করছেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেকে মানুষের প্রয়োজন মিটাতে নেমে পরেছেন পথে। মানুষের মঙ্গল করনার্থে নিজের ভোগ-বিলাসিতা বাদ দিচ্ছেন। এই সেবা ও আত্মদানের মধ্য দিয়েই আসবে বিজয়।
যিশুর পুনরুত্থান উৎসব পালন প্রত্যেক বিশ্বাসীকে আহŸান করে নিজ নিজ বিশ্বাস ও আশা নবায়ন করতে। কেননা যিশুর পুনরুত্থান হ’ল ঘূণার উপর ভালবাসার সর্বোচ্চ বিজয়। পুনরুত্থিত যিশুর সংস্পর্শে এসে ভীত-সন্ত্রস্ত, হতাশ-নিরাশ ও নেতিয়ে পড়া শিষ্যেরা পেয়েছিল আশা, আনন্দ, শান্তি ও কর্মপ্রেরণা। নবোদ্যমে শিষ্যেরা পুনরুত্থিত যিশুর দয়া ও ভালবাসার কথা বলতে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। আমরা খ্রিস্ট বিশ্বাসীরা প্রতিদিনের জীবনাচরণে, কথাবার্তায় যিশুর পুনরুত্থানের সাক্ষ্য দান করতে পারি।
১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ। শুভ নববর্ষ। নববর্ষ সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন আশা ও নতুন প্রেরণা দান করে । যেকোন মূল্যে প্রাকৃতিক করোনাভাইরাস ও মানবিক করোনাভাইরাস তথা ভেদাভেদ, মনোমানিল্য, দ্বন্ধ সংঘাত, অহংকার, লোভ, লালসা, দুর্নীতি ইত্যাদিকে জয় করি। শুভ পাস্কা, শুভ নববর্ষ।