সারাবিশ্বের মুসলমান ভাইবোনদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। এ বছর বাংলাদেশে তা পালিত হবে ১ আগস্ট। ঈদ মানেই আনন্দ। তবে ঈদুল আযহার প্রকৃত আনন্দটা হলো ত্যাগময় দানের মধ্যে। যেকোন কিছু দিতে গেলে আমাদের ত্যাগ করতে হয়। তারপরও যখন অভাবী ভাইবোনদের কিছু দিতে পারি তখন আমাদের অন্তর নির্মল আনন্দে ভরে উঠে। ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ সকলকে আহ্বান জানায় ত্যাগের মধ্য দিয়ে আনন্দ পেতে ও দিতে। কোরবানির উদ্দেশ্য হলো পবিত্রতার সাথে নিজেদের উৎসর্গ করা। তাই কোরবানির ঈদ আমাদের শিক্ষা দেয় ত্যাগের মাধ্যমে হিংসা, লোভ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং সৃষ্টিকর্তার নিকট নিজেকে সমর্পণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কোরবানির মাংস ভক্ষণ ও লোক দেখানো মাংস বিতরণের মধ্যে ঈদ উৎসব যেন সীমাবদ্ধ করে না রাখি। পশু কোরবানি ও কোরবানির সেই মাংসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহভাগিতা একজন মানুষের মনের পশুকে বশ করে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত করে।
মহামারী করোনাভাইরাসের আক্রমণে দেশের সার্বিক অবস্থা যখন বিপর্যস্ত তখন ঈদুল আযহার বাহ্যিক আনন্দের মাত্রা কিছুটা কম হবার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে অনেকে চাকুরি হারিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে কর্মহীন জীবন কাটাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পক্ষেই একাকী পশু কোরবানি দেওয়া সম্ভব হবেনা। এখানেই সুযোগ এসেছে পরস্পরের সাথে একাত্ম হয়ে ও সহভাগিতা করে কোরবানির ব্যবস্থা করা এবং স্রষ্টার আশির্বাদ গ্রহণ করা। সময় এসেছে পরশ্রীকাতরতা, লোভ ও স্বার্থপরতা ত্যাগ করে উদার ও ত্যাগের মানুষ হয়ে উঠার। ঈদুল আযহার এই উৎসব প্রত্যেকজন মানুষকে, তবে বিশেষভাবে প্রত্যেক মুসলমানকে পরশ্রীকাতরতা, লোভ ও স্বার্থপরতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানায়। স্বার্থপরতা মানুষের ত্যাগের মানসিকতাকে সংকীর্ণ করে ফেলে। ত্যাগের মানসিকতা গড়ে তোলাই এ ঈদের প্রধান উদ্দেশ্য। কাজেই স্বার্থপরতা ও লোভের পথ পরিত্যাগ করে সহভাগিতা ও ধৈর্য ধারণ করতে হবে। পিতামাতার ত্যাগ ও ঈদের আনন্দ সহভাগিতা করার মনোভাব যেন সন্তানের পাথেয় হয়ে থাকে। আগামী দিনের প্রজন্ম যেন পরিবার ও সমাজ থেকে ত্যাগ, সহযোগিতা, সহভাগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সেবার মনোভাব নিয়ে বেড়ে এবং গড়ে উঠতে পারে।
ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ গড়তে একজন কাথলিক যাজকের ভ‚মিকা অনন্য। যিনি শুধু নিজ ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যেই নিজের সেবাকাজ আবদ্ধ রাখেন না কিন্তু নিজ এলাকার সকল মানুষের মঙ্গলের জন্যই সেবাকাজ করেন। খ্রিস্টমণ্ডলী ৪ আগষ্ট পালিত হয় যাজকদেও প্রতিপালক সাধু জন মেরী ভিয়ান্নীর পর্ব দিবস। যাজক জন মেরী ভিয়ান্নী ভক্তদের মঙ্গলের জন্য অবিরত প্রার্থনা, ত্যাগস্বীকার ও উপবাস করতেন। মানুষের মন পরিবর্তনের জন্য নিজে কষ্টস্বীকার করতেন। তিনি বড় দায়িত্বপূর্ণ কোন কাজ প্রত্যাশা করেননি; কিন্তু যে দায়িত্ব’ই দেওয়া হয়েছে তা ঈশ্বরের ইচ্ছা মনে করে গ্রহণ করেছেন এবং সর্বোত্তম ভালবাসা দিয়ে তা সম্পন্ন করেছেন। ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে যেকোন প্রতিকূলতা যে জয় করা সম্ভব তার উত্তম আদর্শ সাধু জন মেরী ভিয়ান্নী। যাজকীয় জীবন ও যাকজীয় সেবাকাজ পরিপূরক তা যাজক জন মেরী নিজ জীবনাদর্শ দিয়ে প্রকাশ করে গেছেন। কোভিড-১৯ অবস্থায় সাধু জন মেরী ভিয়ান্নীর মত যাজকদের বড় বেশি প্রয়োজন। যারা ভক্তদের পাশে থাকবেন এবং প্রয়োজনে যেকোন প্রতিক‚লকতা জয় করতে একসাথে পথ চলবেন। ক্যারিয়ার বা পদমর্যাদার পিছনে না ছুটে সহজ-সরল, সাদা-সিধে সাধু জন মেরী ভিয়ান্নীর মত প্রার্থনাপূর্ণ, ত্যাগময়, ঈশ্বরকেন্দ্রীক জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে একজন যাজক যাজকীয় জীবনের সৌন্দর্য ও মহত্ত¡ নিজ জীবনে চর্চা করতে পারে। যাজকদের নম্রতা, কোমলতা ও ভালবাসায় ভক্তগণ যিশুর বন্ধুত্বের পরশ পায়। যিশু নিজেই তাঁর শিষ্যদের বন্ধু বলে আখ্যায়িত কওে বন্ধুত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
একজন প্রকৃত বন্ধু পাওয়া ঈশ্বরের বিশেষ দান। আত্মিক বন্ধন ও পারষ্পরিক প্রীতি খাঁটি বন্ধুত্বের ভিত্তি। যে বন্ধু সুখ-দুঃখে সব অবস্থায় পাশে থাকে সে-ই প্রকৃত বন্ধু। যেখানে বিন্দুমাত্র স্বার্থপরতা, লোভ ও মোহ থাকবে সেখানে প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে না। এই সকল অপবোধ থেকে নিজেকে মুক্ত করে চেষ্টা করি অপরের ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে।
ভালবাসা, সেবা, ত্যাগস্বীকার প্রভৃতি ইতিবাচক মূল্যবোধ অনুশীলন করার মধ্য দিয়েই বন্ধুত্বের খাঁটিত্ব প্রমাণ হয়। পবিত্র ঈদুল আযহাও আমাদেরকে ত্যাগ, ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসায় উন্নত হতে আহব্বান জানায়। ঈদের আনন্দ অনেক বেড়ে যাবে যখন সামান্য একটু ত্যাগস্বীকার করে বানভাসি ও কোভিড আক্রান্ত মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারি।
সকলের প্রতি রইলো ঈদুল আযহার অনেক শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।