এটি একটি ডেমো আর্টিকেল -02। এটি শুধুমাত্র ওয়েবসাইট সাজানোর জন্য ব্যাবহার হচ্ছে।

ভূমিকা : বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার ঐতিহাসিক সুসং দুর্গাপুর। গারো পাহাড়ের গা ছুঁয়ে প্রবাহিত পাহাড়ী-কন্যা সোমেশ্বরী নদী। নদী তীরে পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত রাণীখং সাধু যোসেফ ধর্মপল্লী’র গির্জা। পাহাড়, নদী আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য লীলায় মন্ডিত রাণীখং। সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আদিবাসীদের বসবাস। প্রকৃতি পূজক পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর কাছে বিদেশী ধর্মপ্রচারকগণ জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করে বহু কষ্টে এই দুর্গম অঞ্চলে খ্রিস্টের প্রেম ও শান্তির বাণী বয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা আজীবন পরিশ্রম করেছেন মান্দিদের সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে খ্রিস্টীয় আলোর পথে পরিচালনা করতে।
সর্বপ্রথম ভিন্ন মণ্ডলীর প্রচারকের মুখে সত্য মণ্ডলীর ধারণাটা রেখাপাত করে কয়েকজন সত্যধর্ম পিপাসু মান্দিদের মনে। এদের মধ্যে জিরিং আন্দ্রিয় হাজং, উজির জেমস্ রুরাম, থিমান ফ্রান্সিস দাংগো, থদিং যোসেফ হাজং ও সিন্ধু মোড়ল (সিন্ধু রুগা) এই পাঁচজন ব্যক্তি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে রাণীখংয়ের থাউশালপাড়া গ্রাম থেকে বহু কষ্টে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে যান। ঢাকায় তারা তৎকালীন বিশপ ফ্রেডেরিক লিনেবর্নের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের এলাকায় কাথলিক ফাদার পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান। প্রকৃতপক্ষে তারাই প্রথম খ্রিস্টের বাণীরূপ বীজ বপন করেছিলেন ময়মনসিংহ এলাকায়। এভাবে মণ্ডলীর কর্তৃপক্ষগণ নানা পর্যবেক্ষণের পর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে থাউশাল পাড়ায় মান্দিদের মাঝে প্রথম প্রেরণ করেন ফাদার এডলফ ফ্রান্সিসকে। এখানেই তিনি প্রাথমিকভাবে মিশনারী কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সুসং দুর্গাপুরের রাজার কাছ থেকে রাণীখং পাহাড়টি ক্রয় করে সেখানে থাউশালপাড়ার গির্জাটি স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়। সেদিনের সাধু যোসেফের গির্জাটি বর্তমানে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।
পটভূমি : তৎকালে হিন্দু, মুসলমান ও প্রোটেষ্টানদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশ করা হতো। এসব সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে কাথলিকদের সংবাদ ও মতামত স্থান পেতো না। কাথলিক ধর্ম রক্ষা, কাথলিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত ব্যক্ত করা, অজ্ঞানতা বিদূরিত করা এবং যাজক শ্রেণী ও কাথলিকদের আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্দেশেই মণ্ডলীর পরিচালকগণ প্রকাশনার উপর গুরুত্ব দেন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের Catholic Directory of India অনুসারে দেখা যায়, সারা ভারতে তখন ১১৩টি কাথলিক সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশিত হচ্ছিল। এসবের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত A Indo Portugueza, সিংহলের Catholic Messenger (১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ) জাফনা থেকে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত ও প্রকাশিত Catholic Guardian এবং মাদ্রাজ হতে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত ও প্রকাশিত Catholic Leader. এগুলো সবই সাপ্তাহিকী ছিল। উল্লেখ্য যে, ঢাকার বিশপ পিটার যোসেফ হার্থের আমলে (১৮৯৪-১৯০৯) ‘হলিক্রস ভের্নাক্যুলার বুকলেট সিরিজ’ নামে সমগ্র বঙ্গে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় ধর্মীয় পুস্তক – পুস্তিকা প্রকাশিত হতে থাকে।
ধর্ম-জ্যোতি : দূরদর্শী বিশপ ল্যগ্রাঁ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের নববর্ষ শুরু করেন ‘ধর্ম-জ্যোতি’ নামে একটি ধর্মপ্রদেশীয় সাময়িকী প্রকাশের মাধ্যমে। সমগ্র বঙ্গে এটাই ছিল বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম কাথলিক সাময়িকী। ঢাকার লক্ষ্মীবাজারস্থ ক্যাথিড্রাল থেকে প্রকাশিত সাময়িকীর প্রথম সম্পাদক ছিলেন ফাদার আলফ্রেড ল্যাপায়ের সিএসসি।
উল্লেখ্য যে, ফাদার ল্যাপায়ের ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ধর্মজ্যোতির সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। একই বছরের মে মাস থেকে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি পর্যন্ত ফাদার ডেরোশী সিএসসি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন।
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি থেকে ফাদার তিমথী জে. ক্রাউলী সিএসসি সম্পাদক ও প্রকাশক নিযুক্ত হন। কিন্তু একই বছর তিনি ঢাকার বিশপ নিযুক্ত হবার পর বিভিন্ন দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়ার দরুণ কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়নি। অবশেষে দেড় যুগ পর ‘ধর্ম-জ্যোতি’ বন্ধ হয়ে যায়।
নব উদ্যোগ ঃ ‘ধর্ম-জ্যোতি’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন ময়মনসিংহ জেলার দুর্গাপুর থানাধীন রাণীখং ধর্মপল্লীতে কর্মরত ফাদার রিচার্ড ডুয়েন প্যাট্রিক সিএসসি।
রাণীখং মিশন চিঠি : ফাদার রিচার্ড ডুয়েন প্যাট্রিক ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে বর্তমান জাতীয় সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর আদিপুরুষ ‘রাণীখং মিশন চিঠি’ ময়মনসিংহ শহরের উদয়ন মুদ্রণালয় থেকে ছাপিয়ে প্রকাশ করেন। মূলত এটি একটি ‘প্যারিশ বুলেটিন’ রূপে প্রকাশিত হয়। ‘রাণীখং মিশন চিঠি’ প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে, ময়মনসিংহের রাণীখং মিশন থেকে। পত্রিকার সাইজ ছিল লম্বা ৯ ইঞ্চি ও প্রস্থে ৭ ইঞ্চি। প্রথম পৃষ্ঠাতে পত্রিকার কোন লোগো বা মনোগ্রাম ব্যবহৃত হয়নি। মোট তিন পাতার অর্থাৎ ছয় পৃষ্ঠার পত্রিকা। কোন রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নেই। পেছনের শেষ কভারে নিচের অংশে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে Q Published by Rev. Patrick csc cum Permissu Superioris and Printed by Dhirendra Chandra De at the Udayan Press, Mymensingh.
কাথোলিক মিশন পত্রিকা : প্রথম সংখ্যাটি ময়মনসিংহ এলাকার বাইরেও সমাদৃত হওয়ায় এবং আঞ্চলিকতার ভাব দূরীকরণার্থে পূর্বের নাম পরিবর্তন করে দ্বিতীয় সংখ্যাটির (ডিসেম্বর ১৯৪১) নামকরণ হয় ‘কাথোলিক মিশন পত্রিকা’। প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাস হতে জুলাই ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই নামে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এ সময় পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ফাদার প্যাট্রিক ঢাকা জেলার মঠবাড়ী মিশনে বদলী হওয়াতে এবং অন্যান্য সুবিধার নিমিত্তে পত্রিকার সম্পাদনা দপ্তর ময়মনসিংহ শহরের কাথলিক মিশনে স্থানান্তর করা হয়। পত্রিকা পরিচালনার ভার (সম্পাদনা ও প্রকাশনা) ময়মনসিংহ কাথলিক মিশনের উপর অর্পিত হয়।
কাথলিক মিশন পত্রিকা : ‘কাথলিক মিশন পত্রিকা’ ময়মনসিংহ এই নামে ৭ম সংখ্যাটি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের মে মাস থেকে জুলাই এর ৯ম সংখ্যা পর্যন্ত চলে। জুন সংখ্যায় দেখা যায় পত্রিকার মূল্য প্রতি সংখ্যা দুই পয়সা বার্ষিক মূল্য আট আনা ডাকমাশুলসহ ধার্য করা হয়েছে। জুলাই মাসে পত্রিকার রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয় ২৮৪৬। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাস হতে পত্রিকার দশম সংখ্যাটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘কাথলিক মিশন পত্রিকা’। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে এর সম্পাদনা দপ্তর পুনরায় ঢাকায় চলে আসে। পুরোনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজারস্থ হলিক্রস গির্জা, ৮২ মিউনিসিপ্যাল অফিস স্ট্রিট, ঢাকা-১ থেকে এটি প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দ এপ্রিল হতে ১৯৪৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কোন সম্পাদকের নাম পাওয়া যায়নি। শুধু লেখা ছিল কাথলিক মিশন কর্তৃক প্রকাশিত। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সংখ্যা হতে পত্রিকার মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। বার্ষিক সডাক ১টাকা এবং প্রতি সংখ্যার মূল্য ১ আনা। কাথলিক মিশন পত্রিকার মূলনীতি ছিল প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, কথোপকথন এবং সংবাদের মাধ্যমে কাথলিক জনগণকে ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে রাখা। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে কাথলিক মিশন পত্রিকার সম্পাদক হন শ্রীক্ষিতিশ চন্দ্র সত্যব্রত। তিনি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর পর্যন্ত সম্পাদক ছিলেন। প্রয়াত ফাদার যাকোব দেশাই প্রদত্ত তথ্য অনুসারে জানা যায়, শ্রী ক্ষিতিশ চন্দ্র সত্যব্রত ছিলেন একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থানরত যাজকদের তত্ত্বাবধানে তিনি পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন।
প্রতিবেশী : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রতিবেশী’র ইতিহাসে এক নব যুগ সূচীত হয়। মে মাসে ‘কাথলিক মিশন পত্রিকা’ একই সম্পাদকের সম্পাদনায় নতুন নাম পরিগ্রহ করে। এর নাম হয় ‘প্রতিবেশী’। নতুন পত্রিকাটির নীতিমালা ছিল ১) নৈতিক বিষয় সম্বন্ধে সম্পাদকীয় ২) অতীত বা বর্তমানকালের কোন দুর্ঘটনা বা খবরের সমালোচনা ৩) নৈতিক উন্নতি বিষয়ক কোন গল্প বা ঘটনা ৪) মিশনস্থ নানা সংবাদ, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সত্যনিষ্ঠা, স্বাদেশিকতা, প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসা, পরকালে স্বর্গলাভের উপায় ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়াই ইহার মূল উদ্দেশ্য। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ফাদার উইলিয়াম মনাহান সিএসসি নতুন সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর সংখ্যা থেকে প্রতিবেশী ম্যাগাজিন সাইজ থেকে আরও লম্বা ‘ট্যাবলয়েড’ সাইজ ধারণ করে। এতে পত্রিকা হিসেবে এর মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। শিশু কিশোরদের জন্য কিশোরদের আসর নামে বিভাগটি শুরু হয় ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। এই নামে চলে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট সংখ্যা পর্যন্ত। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর হতে কিশোরদের আসর নাম পরিবর্তন করে ‘ছোটদের আসর’ রাখা হয়, যা অদ্যাবধি বহাল রয়েছে।