২০তম জন্মদিন পালনের প্রাক্কালে হিল্ডা যোসেফ নামে গাজার একজন তরুণী যুদ্ধের ভয়াবহতা সত্তে¡ও শিঘ্রই যুদ্ধ অবসানের ক্ষীণ আশার কথা ব্যক্ত করে । হিল্ডা যোসেফ আয়্যাদ গাজার পবিত্র পরিবার কাথলিক ধর্মপল্লীর অধিবাসী, যে যুদ্ধের কারণে ধর্মপল্লীতে আশ্রয় নিয়েছে। ২৪ মে তার ২০তম জন্মদিনে সে তার অনুভূতি ও আশার কথা তুলে ধরে বলে;
এই রাত, যা আমার জীবনের নতুন এক দশকের সূচনা উপলক্ষে উদ্যাপন হবার কথা ছিল – সেই রাত আমি কাটাচ্ছি বিচ্ছিন্ন ও হারানোর এক বেদনা নিয়ে। বিশ বছর যেন অতীতের ধ্বংসস্তূপের মাঝে এক বিবর্ণ স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। আমার বাড়ি, যেখানে আমার শৈশব ও যৌবনের স্বপ্নেরা বেড়ে উঠেছিল এখন তা আমার স্মৃতিতে শুধুই এক বেদনার চিহৃ। আমার জীবনের শুরু ও গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বছর যুদ্ধের নিষ্ঠুর ও নির্মম দুর্যোগে হারিয়ে গেছে। এই সময়গুলো আমিসহ আমার প্রজন্মের অসংখ্য তরুণ–তরুণীর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যারা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিল কিন্তু বাস্তবে কঠিন বাস্তবতায় বন্দী হয়েছে।
অনেক সময় আমি নিজেকে বিশ বছরের এক যুবতী ভাবলেও, আমার মন যেন বহুগুণ বেশি বয়সের ভার বহন করছে। আমি আর ফিরে যেতে পারি না আমার অতীতে যখন আমার স্বপ্নগুলো সহজ–সরল ও বাস্তবায়নযোগ্য ছিল। এখনও আমি শান্তিতে থাকতে পারিনা, কেননা চারিপাশের সমস্ত কিছু আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমি কি হারিয়েছি। ভবিষ্যতও ধোঁয়াটে, উত্তর না জানা বিভিন্ন প্রশ্নে ভরপুর।
তবুও এই গভীর অন্ধকারেও, এক ক্ষীণ আশার আলো আমার পথ আলোকিত করে। জীবনের শুরুতেই আমি হতাশায় নিমজ্জিত হতে রাজি নই। আহত কিন্তু দৃঢ় সংকল্পে পরিপূর্ণ এক হৃদয় নিয়ে আমি এখনও অপেক্ষা করছি দুঃস্বপ্ন শেষের সেই মুহূর্তের জন্য যা আমাদের স্বপ্নগুলোকে শ্বাসরোধ করে। আমি অপেক্ষা করছি সেদিনের জন্য, যেদিন আমি স্বাধীনতার সুবাস উপভোগ করতে পারবো, আমার চুরি হয়ে যাওয়া ভবিষ্যত গড়তে প্রথম পদক্ষেপ নিতে পারবো এবং আমার হারিয়ে যাওয়া যৌবনের বছরগুলোকে দ্বিগুণ আনন্দ ও অধিকততর শক্তি নিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারবো।
আমার এই বিশতম জন্মদিন বার্ষিকী পালনের কোনো উদ্যাপন নয়, কিন্তু দৃঢ়তা ও প্রতিরোধের এক অবস্থান। এটি আমাদের যৌবন ও স্বপ্নের বিনিময়ে পরিশোধ করা মূল্য মনে করিয়ে দেয়, কিন্তু একই সাথে এটি আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়ের ঘোষণা যে, আমরা টিকে থাকবো এবং আশাবাদী থাকবো সেই ভবিষ্যতের প্রতি যা আমাদের জন্য ন্যায়বিচার, শান্তি এবং যা কিছু হারিয়ে গেছে তার প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ বয়ে আনবে।
আমার জীবনের এই নতুন দশকের শুরুতে, আমি হৃদয়ের গভীর থেকে কামনা করি যে আসন্ন দিনগুলো আমাদের এই দুঃখ–কষ্টের অবসান ঘটাবে, আমাদের ঘরে আবার উষ্ণতা ও নিরাপত্তা ফিরে আসবে এবং আমরা এই প্রজন্মের তরুণেরা – আমাদের স্বপ্নগুলো আবার পুনরুদ্ধার করতে পারবো এবং এমন একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারি যা আমাদের ত্যাগের মর্যাদা দেয়।
সংবাদ উৎস: ভাটিকান নিউজ অনুবাদ: ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু