‘সর্বোচ্চ (সুপ্রিম) পোন্টিফ হিসেবে আমি নির্বাচন করি (Eligo in Summum Pontificem)’ – পোপ নির্বাচনের জন্য কনক্লেভে অংশগ্রহণকারী ১৩৩ জন কার্ডিনাল সকলেই উপরোক্ত কথাগুলো সম্বলিত ব্যালট ব্যবহার করে ২৬৭তম পোপ নির্বাচন করবেন। ব্যালটটি আয়তাকার বা চতুষ্কোনী। ব্যালটের উপরের অর্ধেক অংশে উপরোক্ত ল্যাটিন শব্দটি লেখা থাকে এবং নীচের অর্ধেকটি ফাঁকা থাকে যাতে করে একজন কার্ডিনাল তাদের নির্বাচিত প্রার্থীর নাম লিখতে পারে। ব্যালটটি অর্ধেক করে ভাঁজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
ব্যালট বিতরণ: প্রত্যেকজন কার্ডিনাল ইলেকটর কমপক্ষে দু’ই বা তিনটি ব্যালট পান, যা অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী তাদের কাছে বিতরণ করেন। তারপর, জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল ডিকন লটারির মাধ্যমে তিনজন পরীক্ষক (ভোট গণণার জন্য), তিনজন ইনফারমারিয়ান বা রোগীসেবক (অসুস্থ কার্ডিনালদের কাছ থেকে ভোট সংগ্রহের জন্য) এবং তিনজন সংশোধক (গণনা যাচাই করার জন্য) নিয়োগ করেন। অসুস্থতা বা অন্য বিশেষ কোন কারণে নিয়োগপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিরা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে অপারগ হন তখন তাদের জায়গায় নতুন ব্যক্তি নির্বাচন করা হয়। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই কলেজ অফ কার্ডিনালের সেক্রেটারী, পোপীয় উপাসনা পরিচালনাকারীসহ সকল অ-নির্বাচক ব্যক্তিদের সিস্টিন চ্যাপেল ত্যাগ করতে হয়। এরপর জ্যেষ্ঠ কার্ডিনাল ডিকন দরজা বন্ধ করে দেন। শুধু অসুস্থ কার্ডিনালদের ভোট সংগ্রহ করতে রোগীসেবকদের জন্য তা খোলা ও বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
কান্নার ঘর (The‘Room of Tears’) : পোপ নির্বাচিত হলে পর তাকে সিস্টিন চ্যাপেলের পাশে ছোট একটি কক্ষ ‘কান্নার ঘরে’নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি পোপের জন্য রাখা সাদা পোষাক পরিধান করবেন।
ভোট দানের প্রক্রিয়া: অগ্রাধিকারের ক্রমানুসারে প্রত্যেকজন কার্ডিনাল, ব্যালটে তাদের প্রার্থীর নাম লেখেন, ভাঁজ করেন এবং তা উঁচু করে তুলে ধরেন যাতে অনেকে তা দেখতে পারেন। তারপর তা বেদীতে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে একটি পানপাত্রে তা রেখে প্লেট দিয়ে ডেকে রাখা হয়। তারপর প্রত্যেক কার্ডিনাল ইলেকটর উচ্চস্বরে বলেন; আমি আমার সাক্ষী হিসেবে প্রভু যিশু খ্রিস্টকে ডাকি, যিনি আমার বিচারক হবেন যাতে আমার ভোট তাকেই দেওয়া হবে বলে বিশ্বাস করি যাকে ঈশ্বর পোপ হিসেবে নির্বাচন করবেন। এরপর কার্ডিনাল ইলেকটর ব্যালটটি বেদীতে রাখা প্লেটের মধ্যদিয়ে পানপাত্রে রাখেন। এরপর বেদীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজ আসনে ফিরে আসেন। যেসকল কার্ডিনাল কনক্লেভে উপস্থিত কিন্তু অসুস্থতার কারণে হেঁটে বেদীতে যেতে অক্ষম তাদের ভাঁজ করা ব্যালট একজন পরীক্ষক সংগ্রহ করে বেদীতে রাখেন। তবে পরীক্ষক এ সময় কোন শপথ বাক্য উচ্চারণ করেন না। অতি পীড়িত কার্ডিনাল যারা চ্যাপেলে থাকতে পারেন না, তাদের কাছ থেকে ভোট সংগ্রহ করার জন্য ৩জন রোগীসেবককে ব্যালটের একটি ট্রে এবং ব্যালট বাক্স্ ( যা প্রমাণিত খালি এবং যার চাবি বেদীতে রাখা হয়) দিয়ে প্রেরণ করা হয়। ব্যালট ব্যাক্সের উপরের দিকে একটি ছিদ্র থাকে যা দিয়ে ভাঁজ করা ব্যালট ভিতরে রাখা যায়। অসুস্থ কার্ডিনালেরা ভোট দিলে পর রোগীসেবকেরা ব্যালট বাক্স চ্যাপেলে নিয়ে আসেন এবং নির্বাচকদের সামনে তা খোলা হয়। বাক্সের ভোট গণণার পর তা পানপাত্রে রাখা হয়।
গণণা: সমস্ত ভোট প্রদানের পর, প্রথম পরীক্ষক বাক্সটি ঝাঁকিয়ে ব্যালটগুলো উলোটপালোট করেন। এরপর শেষ পরীক্ষক একটি একটি করে ব্যালট গণনা করেন এবং পরে তা দ্বিতীয় খালিপাত্রে রাখেন। যদি ব্যালটের সংখ্যা ভোটারদের সংখ্যার সাথে না মেলে, তাহলে সমস্ত ব্যালট পুরিয়ে ফেলা হয় এবং সাথে সাথেই একটি নতুন ভোট গ্রহণ করা হয়। যদি গণনা সঠিক হয় তাহলে ব্যালটগুলি খোলা ও পড়া হয়। তিনজন পরীক্ষকই বেদীর সামনে একটি টেবিলে বসেন। ১ম জন ব্যালটে লেখা নামটি পড়ে ২য় জনের হাতে দেন, যিনি নামটি নিশ্চিত করেন এবং তৃতীয়জনের হাতে দেন। তিনি সবার জন্য তা জোরে জোরে পড়েন ও রেকর্ড করেন। যদি দু’টি ব্যালট একই ব্যক্তির লেখা এবং একই নাম ধারণ করে বলে মনে হয়, তাহলে সেগুলিকে একটি ভোট হিসেবে গণ্য করা হয়। যদি তারা ভিন্ন নাম দেখায় তাহলে উভয়ই অবৈধ, তবে সামগ্রিক ভোট বৈধই থাকবে। ভোট গণনা করা হয়ে গেলে চূড়ান্ত পরীক্ষক প্রতিটি ব্যালটকে এলিগো শব্দের মধ্যে রেখে একটি সূচ দিয়ে ছিদ্র করেন ও দড়ি দিয়ে গেঁথে রাখেন সংরক্ষণের প্রত্যাশায়।
ভোটাভুটিতে একজন কার্ডিনাল দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেলে তিনি পোপ নির্বাচিত হবেন। কেউ প্রয়োজনীয় ভোট না পেলে ২য়,৩য় ও ৪র্থ দিন পর্যন্ত ৪টি করে (সকালে ২টি ও বিকালে ২টি) ভোটাভুটি করা হয়। পঞ্চম দিনে প্রার্থনা ও আলোচনার জন্য রাখা হয়েছে। এরপরে আরো ৭সফায় ভোটাভুটি হতে পারে, পরে বিরতি নিয়ে প্রয়োজনে একই নিয়মে ভোটাভুটি হতে পারে।
ভোটাভুটির পর একবার সকালে এবং একবার বিকালে ব্যালটগুলো পুড়ানো হয়। পোপ নির্বাচিত না হলে চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হবে আর নির্বাচিত হলে সাদা ধোঁয়া বের হবে। রীতি অনুযায়ী সাদা ধোঁয়া ওড়ানোর প্রায় ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে নতুন পোপ সেন্ট পিটার্স স্বয়ারের সামনে ব্যালকনিতে হাজির হন এবং তখন ল্যাতিন ভাষায় ঘোষণা দেয় ‘হাবেমুস পাপাম’অর্থাৎ আমরা একজন পোপ পেয়েছি।
তথ্য: ভাতিকান নিউজ
অনুবাদ: ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু