ফাদার কল্লোল রোজারিও: গত ২৬ অক্টোবর, সোমবার সন্ধ্যা থেকে ২৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চার দিনব্যাপী ঢাকা আর্চবিশপ ভবনে অনুষ্ঠিত হল ঢাকা ও সিলেট ধর্মপ্রদেশের ধর্মপ্রদেশীয় ভ্রাতৃসংঘের যাজকদের বার্ষিক নির্জন ধ্যান। এতে ঢাকার মনোনীত আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুজ ওএমআই, অবসরপ্রাপ্ত বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি ও বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজসহ মোট ৪৮জন ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ও একজন ডিকন অংশগ্রহণ করেন। প্রথম দিনে ঢাকার মনোনীত বিশপ বিজয় ডি’ ক্রুজ ও বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। ঢাকা ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের সভাপতি ফাদার যাকোব স্বপন গমেজ সবাইকে শুভেচ্ছা জানান এবং সবাইকে সক্রিয়ভাবে নির্জন ধ্যানে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান। ঢাকার মনোনীত বিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুজ বলেন, তিনি শুধুমাত্র নির্জন ধ্যানে অংশগ্রহণ করতে এসেছেন এবং সেই সাথে সকলকে নির্জন ধ্যানে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেন। বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজও সবাইকে সুন্দরভাবে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান করেন। চার দিনের সহভাগিতার মূল বিষয় ছিল- যাজকত্ব, খ্রিস্টের যাজকত্ব ও আমাদের যাজকত্ব, আধ্যাত্মিকতা এবং খ্রিস্টের অন্তরঙ্গতা ও তাঁর প্রৈরিতিক কাজ। যিশু খ্রিস্ট কিভাবে পুত্রত্ব লাভ করেছেন, যোহন রচিত মঙ্গলসমাচারে কিভাবে দেখানো হয়েছে তা সহভাগিতা করেন নির্জন ধ্যান পরিচালক বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি।
প্রথম দিন বাইবেলের আলোকে এবং খ্রিস্টমণ্ডলীর ক্রমবির্তন ধারায় সুন্দরভাবে যাজকত্বের বিষয়ে সহভাগিতা করেন। তিনি বলেন, যাজকত্ব হল ঈশ্বরের মহাদান। যাজক পুরো অর্থাৎ অগ্রভাগে থেকে মানুষের কল্যাণ করেন। যাজক যজ্ঞ উৎসর্গের মধ্যদিয়ে নিজে পবিত্র হন এবং অন্যদেরও পবিত্র করেন। নতুন নিয়মে যাজকত্বকে কিভাবে দেখানো হয়েছে সে বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। তাছাড়া সাক্রামেন্তের গুরুত্বের প্রতি ও তিনি আলোকপাত করেন। উপদেশে বিশপ থিয়োটনিয়াস বাইবেল ও প্রতিদিনের বাণীর আলোকে গভীর জ্ঞানময়, বাস্তবধর্মী সহভাগিতা করেন। তাছাড়া প্রাহরিক প্রার্থনা, পবিত্র জপমালা প্রার্থনা, পবিত্র আরাধনা, পাপস্বীকার এবং ব্যক্তিগতভাবে ধ্যানের সুযোগ ছিল। শেষ দিন বিকালে পবিত্র খ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বিশপ থিওটোনিয়াস গমেজ সিএসসি। উপদেশে তিনি বলেন, যাজকত্বে যে সৌন্দর্য রয়েছে, সেই সৌন্দর্য আমরা যেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অটুট রাখি। সেই সৌন্দর্য দিয়ে অন্যদের সেবা করি। যিশু যেমন মানুষকে ভালবেসেছেন, আমরাও যেন তেমনি মানুষকে ভালবাসি। সাধু পল তার পত্রের মধ্যদিয়ে যীশুর ক্রশীয় যন্ত্রণা, মৃত্যু ও পুনরুত্থানকে প্রকাশ করেছেন। যিশু নিজেই হলেন মেষ, বেদী, নৈবেদ্য এবং যজ্ঞ উৎসর্গকারী। আমরা যিশুর যাজকত্বে যেন সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করি। অনেক সময় আমাদের ভক্তির চেয়ে জনগণের ভক্তির ভাব বেশি থাকে। আমরা যেন সবসময় আমাদের ভক্তির ভাব বজায় রাখতে পারি এবং উপাসনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি।
ঢাকা ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের সভাপতি ফাদার যাকোব নির্জন ধ্যান পরিচালককে সহভাগিতা করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা পেয়েছি, হয়েছি আর এখন আমাদের দেওয়ার সময়। আমরা যেন যাজক হিসেবে আমাদের সেবাকাজে আরও উজার করে বিলিয়ে দেই। এছাড়াও, আগত ফাদারদেরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং যারা বিশপস্ হাউজে অবস্থানরত প্রত্যেককে তাদের সেবাদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় এই নির্জন ধ্যানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
Categories
স্থানীয় মণ্ডলীর সংবাদ