গত ২৯-৩১ আগস্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার-শনিবার, পবিত্র ক্রুশ পালকীয় কেন্দ্র, ভাদুনে এপিসকপাল যুব কমিশন প্রথমবারের মতো জাতীয় ওয়াইসিএস এনিমেটরদের প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশের আটটি ধর্মপ্রদেশ থেকে ২ জন চ্যাপলেইন, ২ জন সেক্রেটারী, ৮ জন এনিমেটর, ২৭ জন ছাত্রী ২১ জন ছাত্রসহ মোট ৬০ জন অংশগ্রহণ করে। কর্মশালার মূলভাব ছিল: “Synodal Leadership: Empowering of Student’s Leaders.” বা “সহযাত্রিক নেতৃত্ব: ছাত্র নেতাদের সক্ষমতায়ন।” প্রথম দিন বাইবেল উপস্থাপন ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ছাত্র নেতাদের হৃদয়ে পবিত্র আত্মার প্রেমাগ্নি ও সহায়তা যাঞ্চনা করে প্রশিক্ষণ কোর্স আরম্ভ করা হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্যে ওয়াইসিএস এর জাতীয় চ্যাপলেইন ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরু, সিএসসি বলেন, একজন এনিমেটরের প্রধান দায়িত্ব হলো: “তার অনুসারীদেরকে ঐশ-বিশ্বাস ও ঈশ্বরমুখী প্রত্যাশাকে জাগ্রত করে; তাদেরকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করা যে, একজন ছাত্রনেতা ঈশ্বরের মনোনীত, যা তার জন্য মহত্তর এক আহ্বান।”
“মানসিক স্বাস্থ্য ও পালকীয় সহযাত্রা” এই বিষয়ে সিস্টার লিপি গ্লোরিয়া, এমডিএফএ খুবই সুন্দর ও বাস্তবভাবে শিক্ষা দেন কিভাবে একজন আরেক জনের আবেগ, অনুভূতি, সুখ-দুঃখ অনুভব করে নিজের ও অন্যের যত্ন নিতে পারে। ওয়াইসিএস কি? এর পরিচয়, কেন এই আন্দোলন করা দরকার? এবং করতে গিয়ে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এপিসকপাল যুব কমিশনের প্রাক্তন নির্বাহী সচিব ব্রাদার উজ্জ্বল প্লাসিড পেরেরা সিএসসি। এছাড়া ওয়াইসিএস কর্ম পদ্ধতি ও কার্যক্রম নিয়ে ধারণা প্রদান করেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের যুব সমন্বয়কারী ফাদার প্রলয় আগষ্টিন ক্রুশ এবং শিশু সুরক্ষা ও পরিবেশবান্ধব চেতনায় ছাত্রদের অংশগ্রহণ এবং প্রচারাভিযান বিষয়ে বিস্তারিত আলোপাত করেন ফাদার লিটন গমেজ, সিএসসি।
মূলভাবের উপর অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীলভাবে উপস্থান করেন প্রাক্তন জাতীয় জাতীয় যুব সমন্বয়কারী ফাদার প্যাট্রিক শিমন গমেজ। তিনি বলেন, “ সহযাত্রিক নেতৃত্বের প্রধান উৎকর্ষতা হলো: খোলা মনে ঐশবাণী ও পরস্পরকে শ্রবণ, উন্মুক্ততা, অবধারণ, দন্দ্বের মধ্যেও মিলন সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলমান রাখা।” ওয়াইসিএস এর প্রাক্তন এনিমেটর ও বিসিএসএম এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট স্যান্ডি পিরিচ তার উপস্থাপনায় বলেন, “একজন এনিমেটর হচ্ছেন সহায়ক; ব্যবস্থাপক নন; তাই ছাত্র নেতাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে সেবার জন্য প্রস্তুত রাখা, সহজ ক’রে উপস্থাপন করা, মনে গেঁথে দেওয়া, যত্ন নেওয়া এবং পরামর্শ দেওয়া।” অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মিস প্রত্যাশা কৈলু অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “আমি প্রথমবারের মতো এই ধরণের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দিয়ে আমি আমার ওয়াইসিএস সেল পরিচালনা ও দলের সাথে সহযাত্রা করার প্রেরণা পেয়েছি।” মি: অমিয় দাস বলেন, “আমি অভিজ্ঞতা করতে পেরেছি যে, কিভাবে একজন ছাত্র নেতা হিসাবে আমি নীতিতে খ্রীষ্টিয়ও দৃষ্টিতে থাকব এবং আধুনিক থাকব।”
এই কোর্সের বিশেষত্ব ছিলো অংশগ্রহণকারীদের প্রেরণায় দেশের বন্যার্তদের কল্যাণ কামনায় বিশেষ প্রার্থনা ও ত্যাগস্বীকারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অনুদান সংগ্রহ করা। কোর্স শেষে সকলকে প্রশংসা ও অনুপ্রেরণা হিসাবে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। সমাপনীতে পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ, সভাপতি, এপিসকপাল যুব কমিশন। তিনি তার উপদেশে বলেন, “একজন এনিমেটর হবেন আধ্যাত্মিক জীবন যাপনে , কথায়, চাল-চলনে, সাধনা-ধ্যানে, অধ্যয়নে, এমন কি চিন্তা-চেতনায় আন্তঃমান্ডলিক ও আন্তঃকৃষ্টি-সংস্কৃতি দৃষ্টিভঙ্গীর মানুষ। ” পরিশেষে অংশগ্রহণকারীদের পরিচালনায় ও অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনদিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপ্তি ঘটে।
– এপিসকপাল যুব কমিশন প্রতিনিধি