কারিতাস বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কারিতাস রবিবার ও ত্যাগ ও সেবা অভিযান ২০২১ উদযাপন

শিবা মেরী ডি’ রোজারিও, কারিতাস ইনফরমেশন ডেস্ক : গত ১৪ মার্চ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে কারিতাস বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল অঞ্চল, ট্রাস্ট ও প্রকল্প কার্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে “বিধাতায় বিশ্বাসী হই নতুন দিনের আশায়, দরিদ্রের সেবা করি গভীর ভালবাসায়” মূলসুর নিয়ে কারিতাস রবিবার ও ত্যাগ ও সেবা অভিযান ২০২১ উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরম বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, সহকারী বিশপ, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ফাদার প্যাট্রিক শিমন গমেজ, পরিচালক, পবিত্র আত্মার উচ্চ সেমিনারী, বনানী, ঢাকা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিবা মেরী ডি’ রোজারিও ও চয়ন হিউবার্ট রিবেরু ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কারিতাসের পরিচালক (কর্মসূচি) জেমস গোমেজ। ত্যাগ ও সেবা অভিযান-২০২১ উপলেক্ষ্যে প্রকাশিত দশ ধরনের শিক্ষা উপকরণের পরিচিতি তুলে ধরেন সিডিআই পরিচালক থিওফিল নকরেক।

মূলসুরের উপর আলোচনায় ফাদার প্যাট্রিক শিমন গমেজ বলেন, “পোপ মহোদয় প্রতিবছরই তার প্রায়শ্চিত্তকালীন বাণীতে তিনটি বিষয় চর্চা করার আহ্বান রাখেন- উপবাস, প্রার্থনা ও দানকর্ম বা দয়ার কাজ। আমরা যেন এই তিনটি বিষয়কে আলাদাভাবে না দেখে আমাদের জীবনে এর সমন্বয় ঘটাতে পারি। তাহলেই জীবন হয়ে উঠবে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থপূর্ণ।” মূলসুরের উপর কর্মীদের পক্ষে সহভাগিতা করেন পিন্টু উইলিয়াম গমেজ ও মিইনথেইন প্রমিলা।

প্রতিবছর এই দিনটিতে কারিতাসের কর্মী ভাই-বোনদের দীর্ঘদিন যাবৎ কারিতাসে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ লং সার্ভিস এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) সেবাষ্টিয়ান রোজারিও লং সার্ভিস এওয়ার্ড প্রদানের প্রেক্ষাপট, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, এবছর সারা বাংলাদেশে ২৫ বছর, ২০ বছর, ১৫ বছর এবং ১০ বছর কর্মজীবনের স্বীকৃতি স্বরূপ মোট ২২৯ জনকে লং সার্ভিস এওয়ার্ড প্রদান করা হচ্ছে। এরপর কারিতাস কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সিডিআই-এর ১৪ জন কর্মীর মধ্যে লং সার্ভিস এওয়ার্ড বিতরণ করা হয়। এ পর্বটি পরিচালনা করেন অনিতা মার্গারেট রোজারিও। এওয়ার্ড প্রাপ্তির পর অনুভূতি সহভাগিতা করেন এ্যাঞ্জেলিনা ডায়ানা পোদ্দার ও সরোজ পিটার কোড়ায়া।

প্রধান অতিথি বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ তার বক্তব্যে বলেন, “পোপ মহোদয় তার বাণীতে তিনটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন – বিশ্বাসের জীবন, যা নবায়ন করা একান্ত প্রয়োজন; আশার জীবন, যা আগামী দিনে পথচলার শক্তি যোগায় এবং ভালবাসাময় সেবা দান। আমরা যেন আমিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যেন অপরকে ভালবাসতে পারি। কারিতাস পরিবারের সদস্য হিসেবে কর্মীরা যেন অপরের সেবায় এমন কিছু করতে পারি যা হৃদয়ে নাচন এনে দেয়।”

 

কারিতাসের নির্বাহী পরিচালক মি: রঞ্জন ফ্রান্সিস রোজারিও তার সমাপণী বক্তব্যে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির অনুধ্যানের আলোকে কয়েকটি অংগীকারের কথা উল্লেখ করেন যা কারিতাসের কর্মী ভাই-বোনদের প্রেরণা যোগায়। তিনি বলেন, “আমরা সবাই উপবাস থাকবো ও সংযম করবো, দারিদ্র্যের কষ্ট উপলব্ধি করবো, রিপু দমন করবো; ভালোবাসাময় সেবা (দান, পরিচর্যা, মনোভাব, ব্যবহার ও পরামর্শ) দেবো, বিনয়ী হব; বিধাতায় আস্থা রাখবো, আত্ম-প্রত্যয়ী হব; আশাবাদী হয়ে আগামীর পথে এগিয়ে চলবো; প্রতিদিন প্রার্থনা করবো, দেহ-মন-আত্মায় শান্তি আনবো; নিজে ক্রমান্বয়ে কারিতাস (ঈধৎরঃধঃরাব) হয়ে উঠবো।” সবশেষে পবিত্র খ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

উল্লেখ্য, ত্যাগ ও সেবা অভিযান কারিতাসের একটি অন্যতম প্রকল্প যার মাধ্যমে নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে কৃচ্ছতা সাধনের মাধ্যমে দেশের গরীব, দুঃস্থ ও বঞ্চিত ভাই-বোনদের জন্যে দান করতে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা হয় ও গরীব, দুঃস্থ মানুষের জন্যে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। কাথলিক মন্ডলীর প্রায়শ্চিত্তকাল শুরুর দিন হতে ৯০ দিন ত্যাগ ও সেবা অভিযান পরিচালনা করা হয়। সার্বজনীন কাথলিক মন্ডলীও ‘তপস্যাকালের চতুর্থ রবিবার’-কে কারিতাস রবিবার হিসেবে পালন করে থাকে।