কারিতাস ইন্টারন্যাশনালিজ এর সেক্রেটারী জেনারেল অ্যালিস্টার ডাটন এর বাংলাদেশ সফর

গত ৬ জুন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১.১৫ মিনিটে কারিতাস বাংলাদেশ এর আয়োজনে, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, নসরুল হামিদ মিলনায়তনে কারিতাস ইন্টারন্যাশনালিজ এর সেক্রেটারী জেনারেল অ্যালিস্টার ডাটন এর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী, প্রেসিডেন্ট, কারিতাস বাংলাদেশ, অ্যালিস্টার ডাটন, সেক্রেটারি জেনারেল, কারিতাস ইন্টারন্যাশনালিজ, ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও, প্রেসিডেন্ট, কারিতাস এশিয়া, সেবাস্টিয়ান রোজারিও, নির্বাহী পরিচালক, কারিতাস বাংলাদেশ, দাউদ জীবন দাস, পরিচালক-কর্মসূচি, রিমি সুবাস দাশ,পরিচালক-অর্থ ও প্রশাসন এবং প্রায় ৫৫ জন গনমাধ্যমকর্মী।

সম্মেলনে অ্যালিস্টার ডাটন বলেন, “গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে উদারতা দেখিয়েছে এবং যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, তাতে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত। বিশ্বের নজর যখন অন্য দিকে ধাবিত হয়েছে, তখনওরোহিঙ্গারা এই সব ভুলে শিবিরে টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার একাই তাদেরকে সহযোগিতা করবে এটা আশা করা উচিত নয়। অন্যান্য দেশগুলিকেও পূর্বের মতো প্রয়োজনীয় তহবিল নিয়ে এই সংকটকালীন সময়ে তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের রোহিঙ্গা জনগণকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আজ বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত মানুষদের মধ্যে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোও রয়েছে, যারা কাজ করার কোন অধিকার ছাড়াই প্রান্তিক অবস্থায় বসবাস করছে। এখন যারা কিশোর-কিশোরী, তারা তাদের জীবনের অর্ধেক সময়ই এই বসতিতে কাটিয়েছে। এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে আরও কিছু করতে হবে এবং তাদের ভবিষ্যতের সম্ভবনাগুলোও পরিকল্পনায় নিয়ে নিশ্চিতকরতে হবে।”রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে অ্যালিস্টার ডাটন রোহিঙ্গাদের জন্য শক্তিশালী মানবিক অবস্থান এবং চলমান সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং বিশ্ববাসীকে তাদের জন্য আরো সহায়তার আহবান জানান।

সেক্রেটারী জেনারেল এর বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গাদের জন্য পোপ ফ্রান্সিসের সাম্প্রতিক নবায়নকৃত আবেদনকে প্রতিফলিত করে উদ্বাস্তুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গাদের একটি দলের সাথে দেখা করেছিলেন। ঢাকায় মিরপুরের আরামবাগে একটি ড্রপ ইন সেন্টার (কারিতাস বাংলাদেশ পরিচালিত পথশিশুদের সহায়তা প্রকল্প) পরিদর্শনের মাধ্যমে মি: ডাটনের বাংলাদেশ সফরের কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের সাথে জড়িত পরিবারের সাথে দেখা করতে রজনীগন্ধা বস্তিতেও যান।

সেক্রেটারী জেনারেল গুরুত্বের সাথে জানান যে, বহু বছর ধরেই কারিতাস বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে অভাবী মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছে। এই বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের ১০৫,০০০ এরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই সময়ে কারিতাস বাংলাদেশের কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা কমিউনিটির সাথে আশ্রয়কেন্দ্র  তৈরী এবং খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা, হাইজিন উপকরণ বিতরণের কাজ করেছে।

  মি: আলিস্টার ডাটন্, কারিতাস ইন্টারন্যাশনালিজের সেক্রেটারি জেনারেল ৪ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে আসেন। একই দিনে তিনি মিরপুরে কারিতাসের ড্রপ-ইন সেন্টার, নিরাপদ নগর প্রকল্পের কার্যক্রম ও দুইটি ট্রাস্ট অফিস-মট্স ও কোর-দি জুট ওর্য়াক্স পরিদর্শন করেন।

  পরে তিনি কক্সবাজারে কারিতাস বাংলাদেশ কর্তৃক মায়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত নাগরিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য পরিচালিত কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। কক্সবাজারে তিনি অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জনাব শামসুদ দৌজা নয়ন, ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের প্রিন্সিপাল কোঅর্ডিনেটর, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও এনজিও প্লাটফরম প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ঢাকায়  তিনি ভাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন এস. রান্ডাল, বাংলাদেশের কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও সিএসসি, ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ ক্রুজ, ওএমআই-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ৭ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ থেকে ফিরে যান।

 

-সংবাদদাতা : সজল বালা