বিগত ৩১ জুলাই থেকে ৩ আগষ্ট পর্যন্ত দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের মাতাসাগরের ধর্মপ্রদেশীয় পালকীয় গঠনকেন্দ্রে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক জাতীয় প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণটির মূলসুর ছিল : অন্য ধর্মের প্রতি কাথলিক মন্ডলীর দৃষ্টিভঙ্গী ।
প্রশিক্ষণটির উদ্দেশ্য ছিল: (১) আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উপর সম্যক জ্ঞান দান করা এবং (২) ধর্মপল্লী, ধর্মপ্রদেশে, সন্ন্যাস সংঘে, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় সংলাপ কেন্দ্রিক সেবা কাজ করার জন্য সেবাকর্মী গঠন করা।
৩১ জুলাই বুধবার বিকেলের মধ্যে দিনাজপুর পালকীয় গঠনকেন্দ্রে বাংলাদেশের সকল ধর্মপ্রদেশ, মহাধর্মপ্রদেশ, কারিতাস কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ৮টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং মটস ইনসৃটিটিউট ও সিডিআই থেকে প্রায় ৭৫জন অংশগ্রহণকারী পৌঁছলে পর শুরু হয় নিবন্ধন ক্রিয়া। সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে সহার্পিত খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করা হয়। অতঃপর রাত ৮:৩০ মিনিটে স্বাগতিক দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশের সঞ্চালনায় এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল: বিশপীয় সংলাপ কমিশনের সেক্রেটারী ফাদার প্যাট্রিক গমেজের স্বাগতম ও শুভেচ্ছা-বাণী, উদ্বোধনী নৃত্যসহ অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের পুস্পস্তবক ও পুস্প প্রদান। ধর্মপ্রদেশ ও সংস্থা থেকে আগত অংশগ্রহণকারীদের পরিচিতি অনুষ্ঠানের পর পরই আর্চবিশপ, বিশপ এবং ধর্মপ্রদেশের ও সংস্থার প্রতিনিধিগণ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। এর পরেই বৃহত্তর দিনাজপুর ধর্মপ্রদেশে আন্তঃধর্মীয় পরিবেশের উপর বক্তব্যসহ শুভেচ্ছা-বাণী রাখেন স্বাগতিক ধর্মপ্রদেশ দিনাজপুরের ধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু।
এর পরেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশপীয় খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আান্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের সভাপতি চট্টগ্রাম মহাধর্মপ্রদেশের মহাধর্মপাল পরম শ্রদ্ধেয় আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি।
আগস্ট ১ তারিখ থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত মূলসুর ভিত্তিক যে-সকল বিষয় উপস্থাপিত হয় তা হলঃ (১) আন্তঃধর্মীয় সংলাপ: মৌলিক ধারণা, (ফাদার নরবার্ট গমেজ) ; (২) আন্তধর্মীয় সংলাপের আধ্যাত্মিকতা (কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি) (৩) দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার আলোকে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের ঐশতত্ত্ব, (ফাদার প্যাট্রিক গমেজ) (৪) দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভা-উত্তর আন্তঃধর্মীয় সংলাপের ঐশতত্ত্ব: (ফাদার প্যাট্রিক গমেজ) (৫) ভাটিকানের আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক পোপীয় ডিকাস্টারী (মিঃ মানিক উইলিভার ডি’কস্তা) (৬) আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উপর এশীয় ধর্মতত্ত্ব ও এশীয় ম-লীর দলিলসমূহ (ফাদার প্রলয় আগষ্টিন ক্রুজ) (৭) বাংলাদেশ পালকীয় পরিকল্পনা ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ (কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি) (৮) ইসলাম ধর্মের আালোকে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি – (মোহাম্মদ আবু তাহের সিদ্দিকি, অধ্যাপক, রাষ্ট্র্রবিজ্ঞান বিভাগ, সেতাবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, দিনাজপুর এবং মোঃ আবেদ আলী, শিক্ষক, সেন্ট ফিলিপস্ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দিনাজপুর) (৯) সনাতন ধর্মের আালোকে আান্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি (স্বামী বিভাত্মানন্দ মহারাজ, অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মিশন, দিনাজপুর); (১০) ভক্তজনগণের জীবনযাত্রায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপ : জীবন-বাস্তবতা ( প্রফেসর সামশন হাঁসদা; ইংরেজী বিভাগ, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী), (১১) আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতিঃ জীবন সহভাগিতা (সিস্টার রেবা ভেরোনিকা ডি’কস্তা, আারএনডিএম)।
৩ আগষ্ট শনিবার বৈরী আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কান্তজিউ মন্দির, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন করা সম্ভব না হলেও যথেষ্ট সময় নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মপ্রদেশ ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা, নারী ও পুরুষ প্রতিনিধিদের দ্বারা প্রশিক্ষণটির উপর গঠনমূলক মূল্যায়ন এবং পরিশেষে সমাপনী অনুষ্ঠান । সমাপনী অনুষ্ঠানে ছিল স্বাগতিক বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু’র ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার বাণী। কমিশনের সভাপতি পরম শ্রদ্ধেয় আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার, সিএসসি ধন্যবাদসূচক সমাপনী বক্তব্য দিয়ে প্রশিক্ষণটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সভাপতি আর্চবিশপ সুব্রত ও স্বাগতিক বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু অংশগ্রহণকারী সবার হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন ।
প্রশিক্ষণটির সার্বিক আায়োজন ও ব্যবস্থাপনায় ছিল বিশপীয় খ্রীষ্টিয় ঐক্য ও আান্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন, সিবিসিবি সেন্টার, মোহম্মদপুর, ঢাকা। দেশে সংকটময় পরিস্থিতির পূর্বাভাস পাবার পর ৩ আগষ্ট শনিবারেই সমাপনী মিলন ভোজের পর সবাই বিকেল, সন্ধ্যা ও রাতেই নিজ নিজ গন্তব্য স্থানের দিকে রওনা হয়ে যায়।
সংবাদদাতা: ফাদার প্যাট্রিক গমেজ