গত ৩১ মে, ২০২১ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের উদ্যোগে ২৪ঘন্টা ব্যাপি দিবানিশি রোজারীমালা প্রার্থনা অনুষ্ঠান। যার মূলসুর ছিলো – ভাইবোন সকলে মিলে, জপিবো মায়ের মালা দিবানিশিতে।
করোনা মহামারী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে মানুষ যেন শীঘ্রই স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে সেই উদ্দেশ্য রেখেই গভির ভক্তি ও আনন্দপূর্ণ মন নিয়ে ঢাকা মহার্ধপ্রদেশের সকল ধর্মপল্লী, ধর্মসংঘ ও গঠনগৃহে ২৪ ঘন্টা ব্যাপি রোজারীমালা প্রার্থনা করা হয়।
বিভিন্ন ধর্মপল্লীগুলোর গির্জাগুলোতে খ্রিস্টভক্তগণ গ্রাম ভিত্তিক পালাক্রমে ১২ঘন্টা রোজারিমালা প্রার্থনা করেন। স্বতঃস্ফূর্ত ও আনন্দপূর্ণ মন নিয়ে অনেক খ্রিস্টভক্ত অংশগ্রহণ করেন এতে।
দিবানিশি প্রার্থনা অনুষ্ঠান শুরু হয় ৩১ মে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে সকাল ৬টায় ঢাকা আর্শবিশপ হাউজের অমলোদ্ভবা মা মারীয়ার গ্রুটো থেকে। সেন্ট মেরীস্ ক্যাথিড্রাল গির্জার পাল পুরোহিত ফাদার বিমল গমেজ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৪ ঘন্টাব্যাপী রোজারীমালা প্রার্থনার শুরু করেন । এরপর ঢাকার পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা, তেজগাঁও এ পবিত্র খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার সুব্রত বনিফাস গমেজ। একইসাথে অন্যান্য ধর্মপল্লী গুলোতেও খ্রিস্টাযাগের মধ্য দিয়ে শুরু করা হয় এই বিশেষ প্রার্থনা দিবস।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর মে মাস খ্রিস্টমণ্ডলীতে পালন করা হয় কুমারী মারীয়ার মাস হিসাবে। পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস এইবারের মে মাস উৎসর্গ করেন করোনায় আক্রান্ত ভাইবোনদের সুস্থতা ও অভাবগ্রস্থ মানুষের পাশে সাহায্যকারী ভাইবোনরা যাতে এগিয়ে আসে সেই উদ্দেশ্যে ।
দিবানিশি প্রার্থনা অনুষ্ঠানটিতে সকল খ্রিস্টভক্তদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে সাপ্তাহিক প্রতিবেশী বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের নিজেদের ফেইজবুক পেইজে নিজেদের ধারণকৃত ও অন্যান্য ধর্মপল্লীর শেয়ারকৃত প্রার্থনা সরাসরি সম্প্রচার করে। এ বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠানে সম্প্রচারে সহযোগী হিসাবে ছিলো রেডিও ভেরিতাস এশিয়া বাংলা বিভাগ ও সিগনিস বাংলাদেশ।
শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকল বয়সী মানুষই রোজারীমালা প্রার্থনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৩১ মে তারিখের দুপুরের বৃষ্টিও মঠবাড়ী কিশোর-কিশোরী ও পিতামাতাদের বিরত রাখতে পারেনি রোজারী মালা প্রার্থনায় অংশগ্রহণ থেকে। আর যুবক-যুবতীদের অংশগ্রহণে গোল্লা ধর্মপল্লীর প্রার্থনানুষ্ঠান উৎসবে পরিণত হয়। পরের দিন ১জুন ২০২১ খ্রিস্টাব্দে সকাল ৬টায় রোজারীমালা প্রার্থনায় অংশ নেয় পবিত্র পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা, হাসনাবাদের মারীয়ার সেনাসংঘ ও অন্যান্য মারীয়া ভক্তরা। দিবানিশি ২৪ ঘন্টার রোজারীমালা প্রার্থনার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয় ঐতিহ্যবাহী পবিত্র জপমালা রানীর গির্জা, হাসনাবাদে উক্ত ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার স্ট্যানিসলাউস গমেজ এর পৌরহিত্যে সমাপনী খ্রিস্টাযাগ উৎসর্গের মধ্যদিয়ে।
ঢাকার আর্চবিশপের নির্দেশনায় খ্রীষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ও সিগনিস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ফাদার বুলবুল আগষ্টিন রিবেরু সমাপনী খ্রিস্টযাগের পর পর ২৪ঘন্টা ব্যাপি প্রার্থনায় অংশগ্রহণকারী ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সকল পুরোহিত, সন্ন্যাসব্রতী ও খ্রিস্টভক্তদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞaতা জ্ঞাপন করেন।
দিবানিশি রোজারীমালা প্রার্থনার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেছেন ধর্মপ্রদেশের সকল স্তরের মানুষ। বান্দুরা ক্ষুদ্র পুষ্প সেমিনারীর পরিচালক ফাদার কুঞ্জন মেবার্ট কুইয়া জানান, এই প্রার্থনা অনুষ্ঠান মানুষের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। বুঝা যাচ্ছিল এই সংকটে মানুষজন আধ্যাত্মিকভাবেও ক্ষুধার্ত। একত্রিত এই প্রার্থনার উদ্যোগ তাদেরকে ব্যক্তি জীবনেও এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। – রিপন আব্রাহাম টলেন্টিনু